‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ প্রতারণার নেতৃত্বে দুই চীনা নাগরিক, টার্গেট ৩ দেশ

‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ প্রতারণার নেতৃত্বে দুই চীনা নাগরিক, টার্গেট ৩ দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্মার্ট ফোনের ‘র‍্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে সহজে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়। পরে হাতিয়ে নেওয়া হয় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের মূলহোতা দুই চীনা নাগরিক। বাংলাদেশসহ তাদের টার্গেট আরও তিনটি দেশ।

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য সংস্থাটির সাইবার ক্রাইম উইংয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এক ভুক্তভোগী এই চক্রের হাতে প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করেন। এর ধারাবাহিকতায় মামলা তদন্তে চক্রটির সন্ধান পায় এটিইউ।

তিনি জানান, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে থেকে প্রতারণা চালিয়ে আসছে।

অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ থেকে কয়েক হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই টাকা আদায় করা হয় উচ্চ সুদে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও আপত্তিকর ছবি বিভিন্ন জনকে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কল সেন্টারটির পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) সাইবার ক্রাইম উইং। তবে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড দুই চীনা নাগরিককে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

যে তিন দেশে টার্গেট তাদের:
ফারহানা জানান, বাংলাদেশে বসে তারা প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদেরও একইভাবে লোন দিয়ে প্রতারণা করতো। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো। তারা সহজে লোন দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলতো। এরপর মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার নামে ভোটার আইডি ও ছবি নিতো। গ্রাহকরা এই কাজগুলো করার সময়ে চক্রটি কৌশলে মোবাইলের কল লিস্ট, গ্যালারির ছবি, ভিডিওসহ সব তথ্য হাতিয়ে নিত।

এরপর লোন দেওয়ার পরে উচ্চ সুদে আদায় শুরু করতো। কেউ দিতে আপত্তি জানালেই তাকে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিতো। এই অ্যাপটি বানিয়েছে চীনারা। তারা এটাকে এভাবেই বানিয়েছে যে ডাউনলোড করলেই সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, অভিযানে আমরা দেখতে পাই একটি বাসার ভেতরে গোপনে তারা এ কাজ করছে। তাদের অফিসে কাজ করা তরুণ-তরুণীরা হিন্দি ও উর্দু ভাষায় ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলছে। ভারত ও পাকিস্তানে একই অ্যাপ ভিন্ন নামে লোন দিচ্ছে। একইভাবে তাদের সঙ্গেও লোন দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। ৫০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। এর বিপরীতে তারা ২০ থেকে ২২ লাখ টাকাও আদায় করেছে।

ফারহানা জানান, প্রতারক এই চক্রটি তাদের প্রতিটি কর্মীকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়। পাশাপাশি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারলে বোনাস দেওয়া হতো। এর মাধ্যমে কর্মীরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পেতেন। এই চক্রের এমন কল সেন্টার আরও আছে বলে ধারণা এটিইউর।  

পুলিশ সুপার আরও জানান, অভিযুক্ত মাহি উচ্চশিক্ষিত। সে চীনা ভাষায় দক্ষ ও ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবসা সম্পর্কে জানে। পাশাপাশি সে কথায় অনেক পটু। কীভাবে মানুষকে ভয় দেখাতে হবে, কী বললে টাকা আদায় করা যাবে সে সব জানে। এমনকি তার কর্মীদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করতো গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে। টাকা আদায় করতে না পারলে তাদের বের করে দিতো।

তিনি আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো চক্রটি। মানুষ সহজে টাকা পাওয়ার জন্য তাদের ফাঁদে পা দিতো। এরপর আর চাইলেও বের হতে পারতো না। কোনও কোনও গ্রাহক বাড়িঘর বিক্রি করেও টাকা দিয়েছে। চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো। দেশে বিকাশ ও নগদ ব্যবহার করতো। ভারত ও পাকিস্তানেও একইভাবে আদায় করতো। তারা যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করতো। তারা একটি নম্বর ব্যবহার শেষে বন্ধ করে দিতো। এমনকি কোনও গ্রাহককে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে নিজেরা ডিলিট করে দিতো। কোনও আপত্তিকর তথ্য নিজেদের কম্পিউটারে রাখতো না। এসব ছবি বানানোর জন্য আলাদা আরেকটি দল রয়েছে। তারা দেওয়ার পরে সব ডিলিট করে দিতো।

news24bd.tv/FA