দ্বিনি কাজের সুফল লাভের উপায়

প্রতীকী ছবি

দ্বিনি কাজের সুফল লাভের উপায়

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

সামাজিক ও ধর্মীয় কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হয়। জাগতিক উদ্দেশ্যে দ্বিনি কাজ করলে পরকালে এর সুফল পাওয়া যায় না। পার্থিব আকাঙ্ক্ষায় সমাজসেবামূলক কাজ ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং এর পরকালীন প্রতিদান বিনষ্ট হয়। জান্নাতপ্রাপ্ত মুমিনের গুণাবলি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আহারের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে খাবার দেয় এবং বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমাদের আহার দিই।

আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও না। ’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৮-৯)
পুণ্যময় কাজের মাধ্যমে মানুষের ওপর মর্যাদা ও বড়ত্ব কামনা করা নিষিদ্ধ। এটা দুইভাবে হয়ে থাকে।

এক. দ্বিনি কাজের বিনিময়ে দুনিয়াবি সম্পদ উপার্জন করা।

এটি সম্পদের লোভের চেয়ে অনেক বেশি মন্দ ও ক্ষতিকর। কেননা ইলম ও আমলের মাধ্যমে আখিরাত সন্ধান ও আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করা হয়। অথচ তা না করে যদি এর উদ্দেশ্য সম্পদ হাসিল করা হয়, তাহলে সেটি তার জন্য জাহান্নামের কারণ হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা গাঢ় অন্ধকার রাতের অংশ সদৃশ ফিতনাগুলোতে পতিত হওয়ার আগেই দ্রুত সৎকর্মের দিকে ধাবিত হও—যখন ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে উঠবে মুমিন অবস্থায় ও সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়।
আর সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায় ও সকালে উঠবে কাফির অবস্থায়। সে দুনিয়ার বিনিময়ে তার দ্বিনকে বিক্রি করবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৮)

এর অর্থ এটা নয় যে দ্বিনি ইলম শিখলে কিংবা ধর্মসম্পৃক্ত কাজ দিয়ে সম্পদ অর্জন করা যাবে না। বরং এর অর্থ হলো দ্বিনকে অক্ষুণ্ন রেখে বৈধ সম্পদ অর্জন করা। সম্পদ যেন লক্ষ্য না হয় যে দ্বিন বিক্রি করে হলেও তা অর্জন করতে হবে।

দুই. ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন, জ্ঞানের প্রসার কিংবা সামাজিক ও ধর্মীয় কাজের মাধ্যমে মানুষের ওপর নেতৃত্ব করা ও শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করা। এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ। কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম শেখে এ জন্য যে তার দ্বারা সে আলেমদের মোকাবেলা করবে অথবা বোকাদের সঙ্গে ঝগড়া করবে অথবা লোকদের চেহারা তার দিকে ফিরিয়ে নেবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৪)

সম্পদ ও নেতৃত্ব এবং এই দুটির লোভ মানুষের দ্বিনকে ধ্বংস করে দেয়। শেষে তার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না যতটুকু আল্লাহ ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। আর এটি মূলত দুনিয়ার লোভ থেকে আসে। আর দুনিয়ার লোভ আসে প্রবৃত্তি পূজা থেকে। আর প্রবৃত্তি পূজার ফলে মানুষ হারামকে হালাল করে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, জাহান্নাম তার ঠিকানা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার রবের সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করেছে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামি থেকে বিরত রেখেছে, জান্নাত তার ঠিকানা হবে। ’ (সুরা নাজেআত, আয়াত : ৩৭-৪১)

জানা আবশ্যক যে উচ্চ সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার লোভ মানুষের স্বভাবজাত। আর এ থেকেই অহংকার সৃষ্টি হয়। শয়তান তাকে উসকে দিয়ে মানুষকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করে। এই শয়তানি ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারাটাই আল্লাহর পরীক্ষা। হতভাগ্যরা এই ফাঁদে পা দিয়ে দুনিয়া অর্জন করে ও আখিরাতে বঞ্চিত হয়।

কিন্তু জ্ঞানীরা স্থায়ী মর্যাদা চায়। যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং যা আখিরাতে পাওয়া যায়। কেননা দুনিয়ার বড়ত্ব সাময়িক ও নিন্দনীয়। কিন্তু আখিরাতের মর্যাদা চিরস্থায়ী ও প্রশংসনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। ’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৬)

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘যখন তুমি দেখবে কেউ তোমার সঙ্গে দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করছে, তখন তুমি তার সঙ্গে আখিরাতের বিষয়ে প্রতিযোগিতা করো। ’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ, হাদিস : ৩৬৩৫১)

আখিরাতের আকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিরা আল্লাহ ও বান্দার ভালোবাসা পায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, শিগগির তাদের জন্য দয়াময় (স্বীয় বান্দাদের অন্তরে) মহব্বত সৃষ্টি করে দেবেন। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৯৬)

মোট কথা, আখিরাতের মর্যাদা সন্ধান করলে দুনিয়ার মর্যাদা সেই সঙ্গে অর্জিত হয়। যদিও সে ব্যক্তি তার কামনা করে না বা তার জন্য চেষ্টাও করে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার মর্যাদা সন্ধান করে, সে শুধু সেটাই পায়। কিন্তু আখিরাত হারায়। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসবে, সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভালোবাসবে, সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতএব তোমরা ধ্বংসশীল বস্তুর ওপর চিরস্থায়ী বস্তুকে অগ্রাধিকার দাও। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৯৭১২; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ৩২৪৭)

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর