সরকারি চাকরি পেতে মৃত মাকে ‘নিখোঁজ’ সাজিয়ে অভিনয়, অতঃপর..

সন্দেহভাজন সঞ্জয় কুমার

সরকারি চাকরি পেতে মৃত মাকে ‘নিখোঁজ’ সাজিয়ে অভিনয়, অতঃপর..

অনলাইন ডেস্ক

সরকারি চাকরি পেতে পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া মাকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া উড়িষ্যা রাজ্যের বালেশ্বরের কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যাত্রী সাজিয়ে নিখুঁত অভিনয় করেছেন ৪২ বছরের এক যুবক।  

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই যুবকের নাম সঞ্জয় কুমার। তিনি দাবি করেন দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনের এস-৩ (স্লিপার) কামরার যাত্রী ছিলেন তিনি ও তার সত্তরোর্ধ্ব মা। তিনি নিজে দরজার কাছে ছিলেন, দুর্ঘটনার সময় ছিটকে বাইরে পড়ে জ্ঞান হারান।

জ্ঞান ফিরলে অনেক খোঁজ করেও মাকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

রেলমন্ত্রীর কাছে সঞ্জয় দাবি করেন যে কোনো মূল্যেই হোক তার মাকে যেন খোঁজা হয়। তার অভিনয় এত নিখুঁত ছিল যে, ঘাবড়ে যান মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও। তারা দুবার সঞ্জয়কে ফেরত পাঠান রেল মন্ত্রণালয়ে।

সঞ্জয় অভিযোগ করেন, করমন্ডলের দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি মায়ের খোঁজ পাচ্ছেন না। উড়িষ্যার রেল, হাসপাতাল, স্থানীয় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও কোন সুরাহা হয়নি। কেউ তার কথা শুনতে চাননি। মরিয়া হয়ে রেল মন্ত্রণালয়ে এসেছেন তিনি।

সব শুনে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জরুরি বার্তা পাঠান গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদরে। মন্ত্রণালয়ের তলব পেয়ে সর্বোচ্চ তৎপরতায় খোঁজ শুরু করেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

এদিকে এতকিছুর পরেও তাদের টিকিটের কোন তথ্য দিতে পারেননি সঞ্জয়। এমনকি কোথায় টিকিট কাটা হয়েছে, তাও বলতে পারেননি। তিনি শুধু জানান, এক এজেন্ট টিকিট কেটে দিয়েছেন।  

এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংরক্ষিত টিকিটের রিকুইজিশন স্লিপ ও প্রতীক্ষা তালিকায় খোঁজ করা হয়। যেসব স্টেশনে ওই ট্রেন থেমেছে বা যাত্রীরা উঠেছেন সেখানকার সিসি ক্যামেরার ছবি এনে সন্ধান করা হয়। শালিমার, সাঁতারগাছি, খড়্গপুর, বালাসোর প্রভৃতি স্টেশন ছিল ওই তালিকায়।

তার পরে পিএনআর-তথ্য ধরে এস-৩ কামরার সব যাত্রীকে ফোন করে ওই নারীর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সব শেষে যাত্রীদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে শেয়ার করা হয় ওই ব্যক্তির মায়ের ছবি। কিন্তু সেখানে কেউই কোনো হদিস দিতে পারেননি। এমনকি ওই কামরায় যারা উদ্ধারকাজ চালিয়েছিলেন তারাও জানান, এমন কোনো নারীকে দেখা যায়নি। সূত্র: আনন্দবাজার

এরপরই রেল কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে ভেঙে পড়েন সঞ্জয়। তিনি তখন জানান, তার মা ২০১৮ সালেই মারা গিয়েছেন। মূলত একটি চাকরির জন্য তার এই অভিনয়। তার একটি চাকরি খুব দরকার। এদিকে মানবিকতার খাতিরে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি রেল বিভাগ। তবে তাকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, বালেশ্বরে ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বাসিন্দা। তাই ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য শেষ পর্যন্ত খোঁজ চালাতে হয়েছে আমাদের। তারা জানান, এখনো ৮২টি মৃতদেহের দাবিদার মেলেনি। নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

news24bd.tv/aa