‘ঈদের দিনই গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ হয়’

সংগৃহীত ছবি

শরিফুল রাসেল

‘ঈদের দিনই গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ হয়’

‘আমার নাম শরিফুল রাসেল। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বালাহাটা গ্রামে। তবে চার বছর ধরে বগুড়াতেই থাকি। এখন আমার বয়স ১২ বছর।

বগুড়ায় বিভিন্ন মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে বেলুন বিক্রি করি। আব্বা নাই। আম্মাও অসুস্থ, মাথায় সমস্যা। বেলুন বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চলে।
’ 

নাম জিজ্ঞাসা করতেই এক নিশ্বাসে এসব কথা জানায় শরিফুল। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন মা গোলাপি বেগমকে নিয়ে গাইবান্ধা থেকে বগুড়ায় কোরবানির মাংস কুড়াতে এসেছে সে। এরই ফাঁকে বিকেলে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনে দেখা হয় শরিফুলের সঙ্গে।  

শরিফুলের বাবা মজিবুর রহমান ১০ বছর আগে হঠাৎ অজ্ঞাত এক রোগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার মা মাঝে মাঝে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তবে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। তাই মাত্র ৮ বছর বয়সেই শরিফুল এলাকার এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে গাইবান্ধা ছেড়ে পাড়ি জমায় বগুড়া শহরে। এখানে এসে সে বেলুন বিক্রির কাজ করে। এই দিয়ে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করে মাকে পাঠিয়ে দেয় শরিফুল।  এখন তার আয়ের ওপরেই সংসার চলছে।  

শরিফুল বলে, বছরে এই একবারই সুযোগ হয় গরুর মাংস খাওয়ার। গত কোরবানি ঈদে এভাবেই মানুষের বাড়ি বাড়ি কুড়ায়ে গরুর মাংস খেয়েছিলাম। গরুর মাংস আমার খুব প্রিয়। ঈদ করতে গাইবান্ধা গিয়েছিলাম। তবে মাকে নিয়ে মাংস কুড়াতেই আজ সকালে বাসে চড়ে বগুড়ায় এসেছি। মাঝে মাঝে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাই। তবে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে পারি না। মায়ের মাথায় কিছুটা অসুখ আছে। তার চিকিৎসা করাতেও অনেক টাকা লাগে।

প্রতিদিন নিউমার্কেট, রানা প্লাজা ও পার্কের সামনে গিয়ে বেলুন বিক্রি করি। এরপর স্টেশনে গিয়ে ঘুমাই, আবার ট্রেনে করে বাড়িতে চলে যাই। এভাবে এখন আমাদের দিন যায়। ’ 

শরিফুল আরও জানায়, সন্ধ্যার পর মাকে নিয়ে আবারও গাইবান্ধা যাবে সে। সারাদিনের কুড়ানো কুরবানির মাংস দিয়ে খায়েশ করে মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার পর সপ্তাহখানেক বাদে শরিফুল আবারও বগুড়া আসবে।  

News24bd.tv/aa