বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে এসেছিল স্বাধীনতার পূর্বাভাস

রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবি: সংগৃহীত

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে এসেছিল স্বাধীনতার পূর্বাভাস

অনলাইন ডেস্ক

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।

বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ১৯ মিনিটের মহাকাব্য রচনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করেন।

সেদিন রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে রচিত অমর কবিতাখানি পুরো বাঙালি জাতি মন্ত্রমুগ্ধের মতো অবগাহন করেছিল। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম— বঙ্গবন্ধুর এই ডাক নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র করে তুলেছিল। এদিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন—‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ। ’

৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নামের এক অমরবাণী শোনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান।

তিনি বীর বাঙালিদের অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন তাঁর ভাষণের শেষ দুটি শব্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে। রাজনীতির কালজয়ী কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন, ক্ষমতাকে কী করে নিয়ন্ত্রিতভাবে সবার কল্যাণে ব্যবহার করতে হয়, তাও বুঝিয়ে দেন। শিখিয়ে দেন আত্মরক্ষামূলক কিংবা প্রতিরোধক সমরনীতি, যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি।

জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো, ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু তার ১৯ মিনিটের ভাষণে, পাকিস্তান সরকারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে বাঙালির প্রতি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। ঘোষণা করেছিলেন অসহযোগ আন্দোলনের।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণ জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছিলো; যা সমগ্র জাতিকে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার দমনমূলক শাসন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে।

১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে দিবসটি জাতীয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায়, এ উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর, ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’-এর পরিবর্তে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

news24bd.tv/DHL