রোজার বেশ কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

রোজার বেশ কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

রোজার বেশ কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

অনলাইন ডেস্ক

মাহে রমজান মুসলমানদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য এক অনন্য সেরা মাস। এ মাসের একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদাতের সমান। মাহে রমজান মাস সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন।

রমজান মাস আমাদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে আছে সেহরি, ইফতার, তারাবি, ইতিকাফ, লইলাতুল কদর, ফিতরা ও ঈদুল ফিতর। কোরআন নাজিল হয়েছে এ মাসের লাইলাতুল কদরে, সংঘটিত হয়েছে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদর ও বিজয় হয়েছে পবিত্র মক্কা।

তবে রমজানের অন্যতম বিধান হলো সিয়াম সাধনা।

এর জন্য প্রয়োজন সংযম। কিন্তু এ সংযম পালনে আমরা দৈনন্দিন ভুলবশত কিছু বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির শিকার হই।

আমাদের জীবনে এমন কিছু কাজ আছে, যার মাধ্যমে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করেন। ফলে এমন কোনো কাজ হয়ে গেলে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করেন। পক্ষান্তরে কেউ কেউ এসব কাজ পরিহার করতে গিয়ে অযথা কষ্ট ভোগ করেন। সুতরাং এসব বিষয়ে সব রোজাদারের অবগত হওয়া জরুরি।

রোজা নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান, যেগুলো নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিচে রোজা নিয়ে সেরকম ৬টি খুব সাধারণ ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো।

টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়
আমরা অনেকেই রোজা রেখে টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি। এতে রোজা ভঙ্গ হয় না ঠিকই, কিন্তু মাকরুহ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোজা রেখে টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত না মাজাই ভালো।

তারপরও যদি অভ্যাসবশত আমরা কাজটা করে ফেলি তাহলেও রোজা হয়ে যাবে। তবে এই সময় দাঁতের সুরক্ষার জন্য আমরা মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারি। রমজান মাস কেন্দ্র করে মেসওয়াকের অভ্যাস করা যেতে পারে। তা ছাড়া মেসওয়াক করা হচ্ছে সুন্নত।

রোজা রেখে চুমু খাওয়া বা জড়িয়ে ধরা
অনেকেই মনে করেন রোজা রাখা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী চুমু খেতে পারবে না বা জড়িয়ে ধরতে পারবে না। তবে এ ধারণা ঠিক নয়। তবে শর্ত হলো, গোসল ফরজ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে রোজা ভেঙে যাবে।

হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজা রেখে স্ত্রীকে চুমু খেতেন, স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন করতেন’। (বুখারি: ১৮৪১; মুসলিম: ১১২১)

তবে গোসল ফরজ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা থাকলে এমনটি করা মাকরুহ। বিশেষ করে যুবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রোজা যেহেতু পানাহার ও যৌনতা থেকে সংযমী হওয়ার মাস, তাই এ মাসে দিনের বেলায় রোজাদারদের যৌন উত্তেজক কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (আহসানুল ফাতাওয়া, ফাতাওয়া দারুল উলুম, ইমদাদুল ফাতাওয়া, মিনহাতুল বারি: ৩৬৪ /৪)

শুধু খাবার খেলেই কী রোজা ভেঙে যাবে?
না; শুধু খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙে যাবে বিষয়টি তেমন নয়। আরো কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম নিজের জিব দিয়ে যদি দুর্নাম রটানো হয়, গুজবে অংশ নেয়া বা কাউকে গালিগালাজ করা হয়, তাহলে রোজা কবুল না-ও হতে পারে।

ভুল করে খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙবে কী?
অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায় কি না, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা হবে, যদি আপনি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে দেন।

রোজা রেখে কি ওষুধ খাওয়া যাবে?
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সঙ্গে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন: চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে। এসব ব্যবহারে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ। সেহরির আগে এবং ইফতারের পর তা খেতে হবে। এ ছাড়া অসুস্থ থাকলে রোজা রাখা না-রাখার বিষয়টি চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর নির্ভর করবে। অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা, দুর্বল, ভ্রমণকারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়।

যেকোনো পরিস্থিতিতে রোজা রাখতে হবে
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির ওর রোজা ফরজ করা হয়েছে। শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়।

যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন। আর যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন ফিদিয়া অর্থাৎ গরিবকে কিছু দান করে দিতে হবে।

news24bd.tv/aa