সীমান্তে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি

রাখাইন প্রদেশের বাংলাদেশ সীমান্তে টহল দিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। ২০১৭ সালের ছবি / দ্য ইরাবতী

সীমান্তে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি

অনলাইন ডেস্ক

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে প্রতিদিনই কোনও না কোনও সামরিক ঘাঁটির দখল হারাচ্ছে জান্তা বাহিনী। মিয়ানমারের জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘাতের তীব্রতাও বেড়েছে।

আর এর মধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত জান্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে হামলা আরও বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি।

এমনকি সীমান্তবর্তী ঘাঁটির কিছু অংশ ইতোমধ্যেই দখলে নেওয়ার দাবিও করেছে বিদ্রোহী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরের বাংলাদেশ সীমান্তে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। মূলত সীমান্ত ফাঁড়িসহ মিয়ানমারের জান্তার শক্ত ঘাঁটি লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি হামলা অব্যাহত রাখায় এই লড়াই চলছে।

বিদ্রোহী আরাকান আর্মি সোমবার বলেছে, তারা কাইইন চাউং সীমান্ত ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং শক্তিশালী এই ঘাঁটির কিছু অংশ ইতোমধ্যেই দখল করা হয়েছে।

ইরাবতী বলছে, প্রায় এক মাস আগে জান্তার এই অবস্থানে হামলা শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে আরাকান আর্মি গত শনিবার নিকটবর্তী ইয়ান অং মাইন ফাঁড়ি জব্দ করে। এসময় তারা অস্ত্র ও

গোলাবারুদও নিজেদের দখলে নেয়। পরে সেখানে সরকারি সৈন্যদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

A Chronicle of Collapse: How the Tide Turned Against Myanmar’s Once Mighty Military 

আরাকান আর্মি বলেছে, তামান থার সীমান্ত ফাঁড়িও তাদের আক্রমণের অধীনে রয়েছে এবং ঘাঁটি থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ২০ জনেরও বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে। এছাড়া রোববার পার্শ্ববর্তী বুথিডাং শহরে জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৫২ সদর দপ্তরেও হামলা চালানো হয়।

মিয়ানমারের বিদ্রোহী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গত সপ্তাহে মংডু শহরের গোয়াপ পাই ফাঁড়ি থেকে পলায়নরত সৈন্যদের ধাওয়া করেছিল। এসময় তাদের হামলায় ১২ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়।

হামলায় নিহত জান্তা সেনাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে আরাকান আর্মি। সংবাদমাধ্যম ইরাবতী অবশ্য স্বাধীনভাবে এসব রিপোর্ট যাচাই করতে পারেনি।

এর আগে চলতি মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আরাকান আর্মি জানায়, তারা মংডু শহরের বেশ কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেছে এবং এর ফলে ১৭৯ জন পরাজিত জান্তা সৈন্য বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

পরাজিত হওয়া জান্তা বাহিনী প্রতিশোধ হিসেবে রাখাইন প্রদেশের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে বলেও আরাকান আর্মি জানিয়েছে।

রাখাইনের মিডিয়ার মতে, গত শুক্রবার জান্তা বাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান মাইবোন শহরের নিয়াউং কান গ্রামে বোমাবর্ষণ করেছে। এতে বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ১০ জন আহত হয়েছেন এবং ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

এদিকে, মিয়ানমারে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, এর মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দখল নিয়েছে রাখাইন রাজ্যের বেশকিছু শহরের। এমন অবস্থায় দেশটির রাজধানী ইয়াঙ্গুনে থাকা রাখাইন বাসিন্দাদের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জান্তা সরকার।

আরও পড়ুন : মিয়ানমারে আরও ৯ ঘাঁটি হারাল জান্তা বাহিনী

উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি গত বছরের নভেম্বরে রাখাইন প্রদেশের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চিন প্রদশের পালেতওয়া শহরে শাসক বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি সামরিক কমান্ড সেন্টারসহ প্রায় ১০টি শহর এবং ১৮০ টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই দেশটিতে যুদ্ধ ও সহিংসতা চলে আসছে। এতে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং দশ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

news24bd.tv/aa