ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনকে ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে একটি ফ্লাইটে নেপাল থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে এনসিবির মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়েছি। শাহীন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাই আমরা ইন্টারপোলকেও জানিয়েছি।
তিনি বলেন, শাহীনকে ফেরাতে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করবো।
নেপালে গিয়ে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় অপরাধ করে নেপালে চলে যায় অনেকে। আবার ভারত থেকে অনেক বাংলাদেশি অপরাধী নেপালে চলে যায়। রুট হিসেবে অনেক অপরাধী নেপাল ব্যবহার করে। আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনও ভারত থেকে নেপালের কাঠমান্ডু গিয়ে অবস্থান করেন।
শাহীনের সহযোগী সিয়ামও কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। সিয়াম যখন কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা থেকে নেপালের এনসিবিতে একটি চিঠি পাঠাই। আমাদের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিয়ামকে কাঠমান্ডু পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, কাঠমান্ডু পুলিশের বিভিন্ন স্তরের পুলিশের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অপরাধী কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করে থাকে সেটিও তাদেরকে বলে এসেছি। আমি মনে করি, নেপাল পুলিশ ও বাংলাদেশ পুলিশের আন্তরিকতা আরও বাড়বে। নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশি অপরাধীরা গিয়ে ‘সেইফ হোম’ বানাবে এটি আর হবে না; এই বার্তা কাঠমান্ডু পুলিশ পেয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, কাঠমান্ডু পুলিশ আমাদেরকে আন অফিসিয়ালি জানিয়েছে, তারা সিয়ামকে গ্রেপ্তার করেছে। সিয়ামকে ফেরত আনার বিষয়ে কোনো জটিলতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। তবে এ বিষয়েও আমরা কাঠমান্ডু পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সিয়াম ভারতের পুলিশের কাছেও মোস্ট ওয়ান্টেড। ভারতের সঙ্গে নেপালের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। নেপাল যদি ভারত কিংবা বাংলাদেশের কাছে সিয়ামকে হস্তান্তর করে তবে তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, যদি একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি দেশ দাবি করে তবে হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে নেপাল বিবেচনায় আনবে অপরাধের ধরণটা কি। হত্যা মামলা কোথায় সংগঠিত হয়েছে। নেপাল বিভিন্ন বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেবে সিয়ামকে তারা কোন দেশের কাছে হস্তান্তর করবে।
হারুন অর রশীদ আরও বলনে, ভারত যেহেতু আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। আমাদের ও ভারতের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করছি ভারতের সঙ্গে। দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা কাজ করছেন এমপি আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে। সিয়ামকে ভারতের পুলিশের কাছে দিলে আমাদের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না।
মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত সিয়াম। তাকে যদি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তাহলে আলামত উদ্ধারের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরাও সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো।
সম্প্রতি এমপি আনার অপহরণ মামলার তদারকি কর্মকর্তারা শাহিদুর রহমানকে হঠাৎ বদলি করা হয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, বদলির বিষয়টি আমাদের পার্ট নয়। এটি পুলিশ সদর দপ্তরের একটি রুটিন ওয়ার্ক।
ডিএনএ টেস্টের ব্যাপারে করা সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এমপি আনারের পরিবার যাবেন কলকাতায়। এরপর ডিএনএ স্যাম্পল টেস্ট করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৩ মে তিনি খুন হন। ২২ মে কলকাতার নিউটাউনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ভারতের কলকাতায় তদন্তের পর চার সদস্যের ডিবির একটি টিম নেপালে যায়।
news24bd.tv/কেআই