মুসলিম পরিবারে জন্ম আমার। ছোটবেলায় হুজুর রেখে সিপারা, আমপারা, কুরআন পড়িয়েছেন মা-বাবা। ‘আলিফ বে তে’ পড়ার সময় ‘আঈন’ এবং ‘গাঈন’ অথবা ‘কাফ’ এবং ‘ক্বাফ’ এর উচ্চারণ নিয়ে একটু হিমশিম খেলেও বারবার পড়তে পড়তে শিখে গেলাম।
স্কুলেও ‘ইসলাম শিক্ষা’ নামক একটি বিষয় ছিল।
সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের সেই ক্লাস বাধ্যতামূলক না থাকলেও দু’একজন বন্ধু সেই ক্লাসও করতো। কখনও তাকে আলাদা চোখে দেখতে শেখাননি আমাদের শিক্ষকেরা। তাই ‘সাহা, চক্রবর্তী কিংবা সেন’ কে ‘আহমেদ, রহমান কিংবা হোসেন’ এর সাথে পার্থক্য করিনি কখনও।নাচ শিখতাম শুক্লা সরকারের কাছে।
শিল্পী হিসেবে সেই শৈশব থেকেই নাচ গান করেছি ঈদের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পূজার উৎসবেও। আমার সনাতন বন্ধুটিকে যেমন ঈদের সেমাই খেতে আমার বাড়িতে ডেকেছি তেমনি আমিও গিয়েছি নাড়ু খেতে। বাক্সো ভরে নিয়েও এসেছি তার মা’কে বলে।
কোনোদিন কোনো সাম্প্রদায়িক চিন্তা মাথায় তো আসেনি! সত্যি বলতে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটিই বোঝার দরকার হয়নি আমাদের কখনও।
কিন্তু আজ এ কোন বাংলাদেশে আছি আমরা! কি শিখাচ্ছি আমাদের সন্তানদের!! কোন বাংলাদেশ দিয়ে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের হাতে!!!
যে বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ‘ঈদ মুবারক’ লিখলে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেন কিন্তু একজন মুসলিম ‘শুভ বিজয়া’ লিখলেই তার গুষ্টি উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শত শত মানুষ! যে বাংলাদেশে অন্য ধর্মের অনুসারীদের নিজ ধর্মীয় উৎসব পালনের কোনো স্বাধীনতা নেই!!
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু যেতেই গুলি বন্ধ করল বিডিআর
মানুষের সঙ্গে যেভাবে কথা বলতেন বিশ্বনবী
সূরা বাকারা: আয়াত ১২৮-১৩৩, আল্লাহর নির্দেশ ও হয়রত ইব্রাহিম (আ.)
কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’
যে বাংলাদেশে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবে ভেঙে দেয়া হয় তাদের দেবী মূর্তি, লুটপাট করা হয় হিন্দুদের দোকানপাট, রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দেয়া হয় হিন্দু জেলেপল্লী আর কিছুই করতে পারিনা আমরা!!!
না… আমার সন্তানদের আমি এই বাংলাদেশ দিয়ে যেতে চাই না। আমি সেই আগের বাংলাদেশ চাই। কি করবো, কিভাবে হবে জানিনা- কিন্তু করতে হবে… কিছু একটা করতে-ই হবে…
লেখাটি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া (সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )