এসএসসি’র ফরম পূরণ ১৫ হাজার টাকা, ইউএনও’র নির্দেশ 

এসএসসি পরীক্ষায় বোর্ড ফি’র সঙ্গে কল্যাণ তহবিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, মডেল টেস্ট, কোচিং ফি, জরিমানাসহ একাধিক বিষয় সংযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক বা দুই বিষয়ে ফেল করলে বেড়ে যায় টাকার চাহিদা। সব ছাপিয়ে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ একটি বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। এতে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও সচেতন মহল। দোষীদের শাস্তির দাবি করেন তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক দেখে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, মাদারীপুরের কালকিনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২৫২ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১২৯ জন শিক্ষার্থী সকল বিষয়ে পাস করে। পরে ১২৩ জন শিক্ষার্থী আবার পরীক্ষা দিলে দ্বিতীয় ধাপে পাস করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে ১৫ হাজার টাকা নিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদের দেওয়া হয়নি কোনো রশিদ। শুধু সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে টাকা আদায় করা হয়। অথচ এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ বোর্ড ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৫ টাকা। বিলম্ব ফি ধরে আরো একশ’ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়মকে উপেক্ষা করে ফরম পূরণের নামে বাড়তি টাকা নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে এই টাকা জোগাড় করতে না পারায় ফরম পূরণ করতেও পারেনি।

আরো জানা যায়, শুধু কালকিনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়, এবার মাদারীপুরে সরকারি ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়, কুলপদ্বী উচ্চ বিদ্যালয়, সামসুন্নাহার ভূইয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তাঁতীবাড়ি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য মতে, মাদারীপুরের ৪টি উপজেলায় ১৭৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৭০টি মাদ্রাসা রয়েছে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ১৭৩৫ টাকা ও মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ১৬৪৫ টাকা। চলতি মাসের ৬ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, ১৪ তারিখের পরে ১০০ টাকা বিলম্ব ফি দিয়ে ২১ নভেম্বরের মধ্যে  ফরম পূরণ করা হয়। নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত কেউ টাকা নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে শিক্ষকের পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি সামাজিক মানুষ। অনেক সময় শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অনুরোধে কিছু অনিয়ম করেছি। তবে সেটি অফিসিয়ালি ঠিক আছে। তারপরেও যারা দোষী তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। যদি ইউএনও’র নির্দেশে এমন কাজ হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অনিয়মন আর দুর্নীতিকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বেলাল/তৌহিদ)