হাসপাতালে ঘুষ নেওয়ার সময় ধরা, ৩ নার্স বরখাস্ত

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিওমেক) ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় বাংলাদেশ নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের  (বিএনএ) সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।  এ ঘটনায় হোতা পলাতক রয়েছেন।

তবে হাতেনাতে আটক দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইসরাইল আলী সাদেক (৪৪) ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও নগরের কাজলশাহ-১৭৬ নং বাসার মৃত মজর আলীর ছেলে।

এজাহারনামীয় অপর দুই আসামি হলেন- ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আমিনুল ইসলাম (৪৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার মেরাসানী গ্রামের ছেলে এবং একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমন চন্দ্র দেব (৪১)। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার স্বগীয় সুনীল কুমার দেবের ছেলে।   

বুধবার (১০ জানুয়ারি) হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বাদী হয়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে সিনিয়র এক নার্সের কাছে এরিয়ার বিল থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করেন। পরবর্তীতে দাবিকৃত টাকার ছয় লাখ টাকা নিতে সাদেক তার সহযোগী আমিনুল ও সুমন দেবকে পাঠান। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টোর রুমে সেই টাকা নিতে গিয়ে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থার হাতে আটক হন দুজন।  মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।  

তবে ঘটনায় পলাতক সাদেককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ঘুষ লেনদেনকালে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আমিনুল ও সুমনকে আটক করা হয়। যেহেতু মামলা হয়েছে, তাই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের উপ পরিচালককে প্রধান করে গঠিত কমিটি ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার পর গণমাধ্যমের সামনে ঘুষ লেনদেনের সত্যতা নিশ্চিত করে মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, এই ঘটনার মূলহোতা বাংলাদেশ নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক পলাতক রয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ঘটনায় নাম প্রকাশে না করার শর্তে ঘুষ প্রদানকারী সিনিয়র নার্স গণমাধ্যমকে বলেন, তার এরিয়ার (ডিউটির) বিলের ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। সেই টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা চায় ইসরাইল আলী সাদেক। পরে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দিতে রাজি হই।  মঙ্গলবার দুপুরে ৬ লাখ টাকা সাদেকের হাতে তুলে দিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের স্টোররুমে যাই। সেখানে সাদেক আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আমিনুল ও সুমনকে টাকা নিতে পাঠান। ঘুষের টাকা হস্তান্তর কালে দুইজন লোক এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং আমিনুল ও সুমন দেবকে আটক করে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী বলেন, ইসরাইল আলী সাদেক বিগত দিনে সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন। নার্স হলেও কখনও তাকে নার্সের পোশাকে দেখা যায়নি। আগের দুই পরিচালকের মেয়াদে তার কর্মস্থল নগরের সামসুদ্দিন হাসপাতালে থাকলেও তিনি পরিচালকের কক্ষের পাশে নিজের অফিস করে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকদেরও তার কাছে ধরনা দিতে হতো। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের নার্সদের কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

news24bd.tv/aa