রাস্তায় ঘুরছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি

<p>ইউএন&rsquo;র সহযোগিতায় ফিরলেন বাড়ি</p>

হাবিবুুর রহমান (৬৫)। স্ত্রী সূর্য খাতুনকে (৫০) নিয়ে নিজের দুই শতক জায়গায় তৈরি টিনশেড ঘরে বসবাস করতেন। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামে তাদের বাসা। ছেলে-মেয়েরা বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। পরে ইউএন’র সহযোগিতায় নিজ বাড়িতে স্ত্রীসহ ফিরেছেন হাবিবুর রহমান।

স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমানের চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কোনো ছেলে মেয়েই তাদেরকে ভরণপোষণ দেয় না। বাধ্য হয়ে নিজের শেষ সম্বল ৫ শতক জায়গা বিক্রি করে দেন নিজেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য। কিন্তু সেই জমি বিক্রির কারণেই ২০ (জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাতে কনকনে শীতে বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলে-মেয়েরা। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন তারা। মহারাজপুর এলাকা থেকে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেনকে স্থানীয়রা বিষয়টি জানান। ঠিক তখুনি ইউএনও উপজেলা প্রশাসনের একটি টিম পাঠিয়ে তাদেরকে শীতবস্ত্রসহ খাবার দিয়ে নিজ ঘরে তুলে দেন এবং তার ছেলে-মেয়েদের কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসেন।

হাবিবুর রহমানের ছেলে ফুয়াদ রহমান জানান, তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীর কথা শোনে ৫ শতক জমি বিক্রি করেছেন তার বাবা। জমি বিক্রি করার কারণে তাদের বসবাসের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে অভিমানে তার বাবাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীসহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।

বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান জানান, তার চার ছেলে এক মেয়ে। সকলের বিয়ে হয়েছে। তার স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। স্ত্রী মৃত্যুর পর ছেলে-মেয়ে এবং ছেলের বউ কেউ তাকে দেখাশোনা করেনি। বাধ্য হয়ে শেষ জীবনে চলার সঙ্গী হিসেবে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন।

তিনি নিজেও প্যারালাইজড হওয়ার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। তাছাড়াও ছেলে-মেয়েরা তাকে ভরণপোষণ দেয় না। এজন্য নিজের কিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন সংসার চালানোর জন্য। জমি বিক্রি করার কারণ দেখিয়ে তার ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন তিনি। কনকনে শীতে কাঁপছিলেন। তাদের এ খবর শুনে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেনের সহযোগিতায় তিনি নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন এবং শীতবন্ত্র ও খাবার পেয়েছেন। ইউএন’র প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন জানান, রাতের আঁধারে বৃদ্ধ দম্পতি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে এমন খবর পান একজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে। খবর শুনেই তিনি নিজ গাড়ি দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম ও স্কাউট সদস্য রাসেল আহমেদকে দিয়ে শীতবস্ত্র ও কিছু খাবার পৌঁছান বৃদ্ধ দম্পতির কাছে। তাছাড়াও সঙ্গে সঙ্গেই ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে তাদের নিজ বাড়ির নিজ ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে। তার ছেলেদের সাথে তিনি কথা বলেছেন আর কখনও যেন তার বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে না দেওয়া হয় এবং নির্যাতন করা না হয়। পরে এমন কোনো ঘটনা ঘটালে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি তাদের ছেলেদের জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

‘বসুন্ধরার মালিকে কম্বল পাডাইছে, ইশ্বর তার বালা করুক’

news24bd.tv তৌহিদ