পরকীয়ায় পালানো স্ত্রীর খোঁজে শিশু অপহরণ

আটককৃত রাশেদুল ও রোকসানা (বামে), অপহৃত শিশু আঁখি-

পরকীয়ায় পালানো স্ত্রীর খোঁজে শিশু অপহরণ

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকার আশুলিয়া থেকে অপহরণ হওয়া দেড় বছর বয়সী শিশু আঁখিকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৪। অপহরণের তিন মাস পর সোমবার রাতে গাজীপুর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন রাশেদুল ইসলাম ও তার ফুফু রোকসানা আক্তার।

সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

গত ৩১ মার্চ সকালে আশুলিয়ার শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে শিশু আঁখিকে অপহরণ করা হয়। শিশুটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার পাইক্কা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তাঁর স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাক শ্রমিক।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি জানান, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন সাদ্দাম। ঘটনার কয়েকদিন আগে সেই বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসেন রাশেদ। তখন বাড়ির ম্যানেজার নেই বলে রাশেদের শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে চলে যান তিনি। কয়েকদিন পর অপহরণকারী যুবকটি পুনরায় বাসা ভাড়া নিতে আসে। সে সময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় শিশু আঁখি এবং মিরাজ খেলা করছিল। কথাবার্তার একপর্যায়ে আঁখির পাঁচ বছরের ভাই মিরাজকে কিছু টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকলেট কেনার জন্য পাঠায় রাশেদ। সেই ফাঁকে আঁখিকে কোলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরদিন শিশুটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।

ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৪।

মোজাম্মেল হক বলেন, গত ৩০ মে রাতে রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী রাশেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যমতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় রোকসানা নামে এক নারীকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী রাশেদুল জানিয়েছে, দুই বছর ধরে আশুলিয়ার জিরানীবাজার কলেজ রোড এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। পেশায় রাজমিস্ত্রী রাশেদ বিবাহিত। তার স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশু আঁখির মা মিরা আক্তার আশুলিয়ায় একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। যার সুবাদে দুজনের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিল। রাশেদের স্ত্রী পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে সাত বছরের শিশু সন্তান রেখে পালিয়ে যায়। মা-হারা শিশুকে নিয়ে বিপদে পড়েন রাশেদ।

তার স্ত্রী কার সঙ্গে গেছে এবং কোথায় আছে বিষয়টি অপহৃত শিশু আঁখির মা মিরা জানতেন বলে সন্দেহ করত রাশেদ। স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা জানার জন্য একাধিকবার জিজ্ঞেস করলে প্রতিবার মিরা আক্তার জানায়, রাশেদের স্ত্রী নূরজাহানের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু জানে না। কিন্তু মীরার কথা বিশ্বাস হতো না রাশেদের।

স্ত্রীর সঠিক অবস্থান জানার জন্য সাদ্দাম ও মিরা দম্পতির দেড় বছরের শিশু আঁখিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে রাশেদ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সাদ্দাম ও মিরা দম্পতি কাজে গেলে গত ৩১ মার্চ সকাল ১০টার দিকে বাসা ভাড়া নেওয়ার কৌশলে আঁখির নানির সঙ্গে বাসা ভাড়ার বিষয়ে কথা বলতে যান তিনি। এক পর্যায়ে কৌশলে অপহৃত শিশুর বড় ভাই মিরাজকে টাকা দিয়ে চকলেট খাওয়ার জন্য মুদি দোকানে পাঠায়। এই সুযোগে শিশু আঁখিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

মোজাম্মেল হক আরও জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ পর অপহরণকারী রাশেদ শিশুটির বাবা-মাকে ফোন করে জানায় যে, শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে তাকে ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু নুরজাহানের ঠিকানা না জানায় তারা দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে রাশেদ আঁখির বাবা-মার কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সে মোতাবেক অপহরণকারীর বিকাশ নাম্বারে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান জেনে যাবে ভয়ে রাশেদ মুক্তিপণের টাকা না তুলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করেনি।

রাশেদের বক্তব্য অনুযায়ী, অপহরণের দিন আঁখিকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রতনপুরে ফুপু রোকসানার বাসায় যায় রাশেদ। আঁখিকে নিজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ফুপুর কাছে কিছুদিন রাখার অনুরোধ করেন। পরে গ্রামের বাড়ি রংপুরে আত্মগোপনে চলে যান।

news24bd.tv/আলী