মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক

গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তী মধুমতি নদীতে নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সেতু দুটির উদ্বোধন করেন তিনি।  

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়, যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।

সেতুটি চালু হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কারণ, সেতুটি কালনাঘাট থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে  দেবে।

কারণ, এতে ঢাকা থেকে দূরত্ব হবে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার।

এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে, যার অর্থ তারা যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আরও ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করে।

প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ, যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

২৭.১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪.৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।

এই সেতুর ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা একদিনের মধ্যে ঢাকায় তাদের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে পারবে। সেতুটি চালু হওয়ার ফলে কালনা ফেরি ঘাট হয়ে যেতে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটলো।  

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন

এদিকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বন্দর উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে, অর্থনীতি চাঙা করবে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করবে।

১.২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে।

এতে দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙা হবে। কারণ, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যানবাহনের ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে।  

সেতুটি পূর্বে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জকে পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এখন মোটরচালিত নৌযানই নদীর দুই পাড়ের মানুষ ও অন্যান্য এলাকার জনসাধারণের জন্য পারাপারের প্রধান মাধ্যম।

শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হওয়ায় পঞ্চবটি বিসিক শিল্প এলাকা, পঞ্চবটি মোড়, চাষাঢ়া মোড়, সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জের চট্টগ্রাম সড়ক বা ঢাকার পোস্তগোলা ও শনির আখড়া রুটে যানবাহনকে তীব্র যানজটের সম্মুখীন হতে হবে না।  

যানবাহনগুলো রাজধানীর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে পারবে। এতে করে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপর চাপও কমবে।

প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতু নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।

ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে - পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। এছাড়া, ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও রয়েছে।

সেতুটি শীতলক্ষ্যা নদী বন্দর উপজেলা ও সোনারগাঁ উপজেলাকে জেলা সদর থেকে পৃথক করেছে। এ দুটি উপজেলা সরাসরি সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। দুই উপজেলা থেকে জেলা সদওে যেতে কাঁচপুর ব্রিজ (শীতলখ্যা-১ সেতু) ব্যবহার করতে হতো, যার জন্য নৌকায় নদী পথের মাত্র ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো।

news24bd.tv/ইস্রাফিল