জি-২০ সম্মেলনের পর থেকেই ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বেড়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ স্থাপনা কেন্দ্রে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ফলে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
চলতি সপ্তাহেও ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এসব হামলায় কাবু হয়ে পড়েছে দেশটি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাজধানী কিয়েভসহ ১৫টি অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ’
এ দিকে ইউক্রেনে শীত পড়া শুরু হয়ে গেছে। তুষারপাতও হচ্ছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় উষ্ণতা না পেয়ে হাইপোথার্মিয়ায় বহু ইউক্রেনীয় মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালেও কিয়েভের প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা বিদ্যুৎ ছাড়াই ঘুম থেকে ওঠে। এর আগে কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো রুশ হামলার জেরে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ শিকার হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে বিদ্যুৎ, তাপ এবং পানি ছাড়াই থাকতে হবে। ’
পরে অবশ্য ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ধীরে ধীরে দেশের সকল অঞ্চলে বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা রোমান বলেন, ‘পানি অল্প অল্প করে আসছে। ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ এসেছে। ’
টোনিয়া নামে কিয়েভের আরেক বাসিন্দা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই। তবে পানি এসেছে তবে তা খুবই সামান্য। ’
বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয়দের মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য সারা দেশে ৪ হাজার পয়েন্ট খুলেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। ওইসব পয়েন্টে তাঁবু করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয়দের চা ও কফি দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘কীভাবে যুদ্ধ করতে হয় রুশ সেনারা তা জানে না। তারা একটি মাত্র কাজ করতে পারে, তা হলো সন্ত্রাসবাদ। ’
এদিকে ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বিবিসির ওয়ার্ল্ড টুনাইট প্রোগ্রামে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী রাশিয়া আমাদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্যুৎ যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য ব্যাপক মানবিক সংকট তৈরি করা। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণীর মানুষদের রক্ষ করা। ’
‘আমাদের জনগণদের ১২০ দিন বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ এই দিনগুলো শীতের মাস। এ সময়ে আমাদের জনগণকে সর্বাধিক যন্ত্রণা দিতে চায় রাশিয়া,’ যোগ করেন তিনি।
ভেরেশচুক আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের কিছু অংশ- যেমন দক্ষিণের শহর খেরসনে এখনও বোমাবর্ষণ করছে তারা। ইউক্রেনের সরকার ইতোমধ্যে সেখানকার জনগণদের সরিয়ে নিচ্ছে। ’
খেরসনের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার আর্টিলারি ও রকেট হামলায় সাতজন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা করে রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে বলে অভিযোগ করছে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারিতে মস্কো যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তা শেষ করতে রাশিয়ার দাবি পূরণ করতে হবে ইউক্রেনীয় নেতাদের। এমনটা হলেই ইউক্রেনীয় জনগণের দুর্ভোগ শেষ হবে। ’
সূত্র: বিবিসি
news24bd.tv/মামুন