আত্মজীবনীতে যেসব চাঞ্চল্যকর বার্তা প্রিন্স হ্যারির

প্রিন্স হ্যারি ও উইলিয়াম (ছবি: সংগৃহীত)

আত্মজীবনীতে যেসব চাঞ্চল্যকর বার্তা প্রিন্স হ্যারির

অনলাইন ডেস্ক

আগামী ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত হবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’। বইটিতে একের পর এক চাঞ্চল্যকর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন দ্য ডিউক অফ সাসেক্স। রাজপরিবারের অজানা অনেক গোপন তথ্য তুলে ধরেছেন বইটিতে। ইতোমধ্যে সেই সব গোপন তথ্যের অনেক কিছু ফাঁস হতে শুরু করেছে।

এ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদনও হচ্ছে।  

বিবিসি বলছে, স্পেয়ার নামক বইটিতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও তিক্ততা প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাবা রাজা তৃতীয় চার্লসকে বর্তমান রানি ক্যামিলাকে বিয়ে করতে বারণ করেছিলেন হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়াম। এ ছাড়া উইলিয়ামের হাতে শারীরিক নির্যাতনের দাবি করেছে প্রিন্স হ্যারি, যা দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।

ফাঁস হওয়া বিষয়ে কিংস্টন প্যালেস ও বাকিংহাম প্যালেস এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

স্পেয়ার নামক বইটির একটি কপি হাতে পেয়েছে বিবিসি। এরপরেই সংবাদ মাধ্যমটি একের পর এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেগুলো নিউজ টোয়েন্টিফোরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ক্যামিলাকে বিয়ে করতে মানা

প্রিন্স হ্যারি ও উইলিয়ামের বাবা বর্তমান ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেছেন তিনি। স্পেয়ারে হ্যারি লিখেছেন, তিনি ও উইলিয়াম তাদের বাবাকে রানি ক্যামিলাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। এই দুই ভাইয়ের ভয় ছিল তাদের সৎ মায়ের কাছ থেকে স্নেহ ও ভালোবাসা পাবেন না, বরং রাজ পরিবারে নতুন করে তিক্ততা ছড়াতে পারে। তবে রাজ পরিবারের যোগ দেওয়ার আগে হ্যারি ও উইলিয়ামের সঙ্গে ভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন ক্যামিলা।

হ্যারি অভিযোগ করে আত্মজীবনীতে লিখেন, তাদের বাবাকে খুশি করতে পারলে সৎ মা হিসেবে ক্যামিলাকে গ্রহণ করতে তারা প্রস্তুত ছিলেন।

প্রিন্সেস ডায়না ইস্যু

আত্মজীবনীতে হ্যারি ও উইলিয়ামের মা প্রিন্সেস ডায়নাকে নিয়েও লিখেছেন দ্য ডিউক অফ সাসেক্স। মায়ের মৃত্যুতে কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন হ্যারি তাও উল্লেখ করেছেন। হ্যারি লিখেছেন, ‘মা সবসময় বলতেন, আমরা যে জীবনযাপন করেছি তিনি তা কোনোদিন করতে পারেননি। আমাদের জীবন এমনটাই চেয়েছিলেন তিনি। ’

১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিন্সেস ডায়না। ওই সময় হ্যারির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

গার্ডিয়ান বলছে, শৈশবের তেমন কোনো কথা মনে নেই হ্যারির। মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা কাটানো সময়গুলো মনে রাখতে পারেনি।

ভাইয়ের হাতে শারীরিক নির্যাতন

আত্মজীবনীতে বড় ভাই প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে জখমের অভিযোগ এনেছেন প্রিন্স হ্যারি। প্রিন্স হ্যারি অভিযোগ, অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে বিয়ে করায় দুই ভাইয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এই ইস্যুতে বড় ভাইয়ের হাতে লাঞ্চনার শিকার হতে হয়।

২০১৯ সালে লন্ডনের প্রাসাদে ওই লাঞ্চনার কথা উল্লেখ করে হ্যারি লিখেছেন, মেগানকে ‘বাজে’, ‘বদরাগী’ ও ‘বেপরোয়া’ বলে কটুক্তি করেন বড় ভাই উইলিয়াম। এসব অভিযোগকে ‘সংবাদমাধ্যমের শেখানো বুলি’ হিসেবে দেখতেন হ্যারি। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে এ সংঘাত চরম আকার ধারণ করে।

হ্যারি লেখেন, উইলিয়াম আমার কলার চেপে ধরে, গলার চেইন ছিঁড়ে ফেলে এবং...মেঝেতে ছিটকে ফেলে দেয়। আমি কুকুরের খাবার বাটির সামনে গিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ সেখানে শুয়ে ছিলাম। এতে আমার পিঠে দৃশ্যমান জখম হয়। ’

হ্যারিকে উপহাস করেছিলেন উইলিয়াম ও ক্যাথেরিন

২০০৫ সালে ব্যতিক্রমধর্মী পার্টিতে যাওয়ার জন্য নাৎসি পোশাক পরেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। এ নিয়ে তাকে উপহাস করেছিলেন ভাই উইলিয়াম ও ভাবী ক্যাথেরিন।

বিষয়টি নিয়ে হ্যারি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পার্টিতে কি পোশাক পরে যাবো এ নিয়ে ভাই ও সম্ভাব্য ভাবী ক্যাথেরিনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কি নাৎসি ইউনিফর্ম নাকি পাইলটের কস্টিউম পরবো। এ কথায় দুজন অট্টহাসি দেয় ও বলে, নাৎসি ইউনিফর্ম পর।

মাদক সেবন

আত্মজীবনীতে মাদক সেবন নিয়েও মুখ খুলেছেন হ্যারি। স্পেয়ারে হ্যারি লিখেছেন, ১৭ বছর চলাকালিন একজনের বাসায় তাকে কোকেন দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে ও অনুষ্ঠানে তিনি এ মাদক নিতেন। তবে এতে তিনি আনন্দ পেত না বলেও জানান।

হ্যারি লিখেছেন, ‘এটি খুব মজার ছিল না। এটি আমাকে বিশেষভাবে আনন্দিত করেনি যেমনটি অন্য সবার কাছে মনে হয়েছিল, তবে এটি আমাকে আলাদা একটা অনুভূতি দিয়েছিল এবং এটিই ছিল আমার সেবনের প্রধান উদ্দেশে। ’

গাঁজা সেবন নিয়ে স্পেয়ারে লিখেছেন হ্যারি। ইটন কলেজে পড়ার সময় বাথরুমে বসে তিনি গাঁজা সেবন করেছিলেন। ওই সময় থমাস ভ্যালির পুলিশ তার দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। গাঁজা সেবনের সময় দেহরক্ষীরা ইটন কলেজ ভবনের বাইরে পাহারা দিচ্ছিল বলে জানান তিনি।

২৫ তালেবানকে হত্যা

২০১২-১৩ সালে আফগানিস্তানে হেলিকপ্টারের পাইলট হিসেবে কাজ করেন হ্যারি। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে থাকা অবস্থায় ছয়টি মিশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম আমি। ওই সময় আমাদের হামলায় ২৫ তালেবান মারা গিয়েছিল। এসব মৃত্যুকে ন্যায়সঙ্গত হিসেবে দাবি করেছেন তিনি।

স্পেয়ারে হ্যারি লিখেন, ‘তালেবান হত্যার পরিসংখ্যানটি আমাকে লজ্জিত করে না। যখন আমি নিজেকে যুদ্ধের উত্তাপ ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিলাম, তখন ওই ২৫ জনকে মানুষ হিসেবে ভাবিনি। ভালো মানুষদের হত্যার আগেই এসব খারাপ লোককে মেরে ফেলা শ্রেয়। ’

news24bd.tv/মামুন