নাটোরে আলোচিত শিশু ইশা হত্যার রহস্য উদঘাটন

সংগৃহীত ছবি

নাটোরে আলোচিত শিশু ইশা হত্যার রহস্য উদঘাটন

নাটোর প্রতিনিধি :

নাটোরের লালপুরে সাড়ে তিন বছরের শিশু ইরিন সুলতানা ঈশা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বাবার অনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিরক্ত করায় থাপ্পড়ে মারা যায় ঈশা। এ ঘটনায় তিনজনের নামে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গত বছর ১৫ মার্চ উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।

সে ওই গ্রামের আনসার সদস্য মো. ইলিয়াস হোসেনের একমাত্র সন্তান। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

শনিবার লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামিদের দুইজন পলাতক ও একজন জামিনে রয়েছেন।

ঘটনার সাথে জড়িত আসামিরা হলেন-আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের নিহত ঈশার বাবা মো. ইনছার আলীর ছেলে মো. ইলিয়াস আলী (৩১), প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) ও মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগম (৪৮)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামানিক ও এসআই মোল্লা সোহেল মাহমুদ বলেন, মামলার বাদী (তদন্তে প্রাপ্ত অভিযুক্ত আসামি) নিহতের বাবা আনসার বাহিনীতে কর্মরত মো. ইলিয়াস আলী (৩১) ও অপর আসামি প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) সম্পর্কে চাচি ও ভাতিজা। অর্থাৎ মোছা. শোভা খাতুনের আপন চাচাতো ভাসুরের ছেলে। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২০২১ সালের জুন মাসে কিডনি অপারেশন করে দুর্বল হয়ে যান।
শোভা খাতুন শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক পর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার দিন গত বছরের ১৫ মার্চ ইলিয়াস আলী এক সাথে নাস্তা করে মেয়ে ইরিন সুলতানা ঈশাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে বাড়ির বারান্দায় সিঁড়ির উপর দাঁড় করিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকালে মেয়ে ঈশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে।  

এ সময় ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ঈশাকে থাপ্পড় মারেন। ঈশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে ইলিয়াস আলী শোভা খাতুনের শরীরের উপর বসে থাকা অবস্থায় মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

এরপর ইলিয়াস আলী মেয়ে ঈশার মরদেহ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) বাড়ির সামনে বেলকনির সিঁড়ির উপর ফেলে রাখেন। একপর্যায়ে শেফালী বেগম ঈশাকে মৃত অবস্থায় দেখে মৃতদেহ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ঈশার মা তার মেয়েকে ডাকাডাকি ও খোঁজাখুঁজি করতে থাকলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে মরদেহ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পাশে সামান্য পানি থাকা ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।

এরপর ঈশার মা মোছা. আঁখি খাতুন (২৫) খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে জানান। ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করেন ও সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় আসেন। এদিকে প্রতিবেশী কয়েকজন বিষ দেওয়ার জন্য আমবাগানে যাওয়ার সময় ডোবায় বস্তায় মৃতদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, মামলার বাদী (তদন্ত প্রাপ্ত আসামি) নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও অপর আসামি মোছা. শোভা খাতুন যোগসাজশে ঈশাকে হত্যা করায় তাদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামি মোছা. শেফালী বেগম (৪৮) মৃতদেহ গুম করার লক্ষ্যে বস্তাবন্দী করে ঘটনাস্থলে ফেলে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুই আসামি ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

news24bd.tv/কামরুল