এতিম শিক্ষার্থীসহ ১০০০ অসহায় পেলেন বসুন্ধরার কম্বল

সংগৃহীত ছবি

এতিম শিক্ষার্থীসহ ১০০০ অসহায় পেলেন বসুন্ধরার কম্বল

অনলাইন ডেস্ক

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সহযোগিতায় এক হাজার অসহায় শীতার্ত মানুষের হাতে এসব কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চলতি শীত মৌসুমে দ্বিতীয় দফার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী জেলায় তিন হাজার কম্বল বিতরণ করা হলো।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অসহায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

পরে শুকুন্দী ইউনিয়নের তাহফিজুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ এতিমখানা মাদরাসা এবং ভিটিপাড়া মুহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। মনোহরদী উপজেলা শুভসংঘের বন্ধুরা এসব কম্বল বিতরণ করেন।

কম্বল পেয়ে হাররদিয়া এলাকার আছিয়া বেগম (৪৫) বলেন, ‘ছোট্ট দুই বাচ্চা জারে (শীতে) কষ্ট পাইত। কম্বল পাওনে এহন ওরা একটু শান্তিতে রাইতে ঘুমাইতে পারবে।

কম্বল পাওনে আমার অনেক উপকার অইছে। ’

দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনজনের সংসার আছিয়ার। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান তিনি।

কম্বল পেয়েছেন আরেক অসহায় আজিমুন বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে শীতের কষ্টের পর নতুন কম্বল ঈদের আনন্দের মতো লাগছে। আমরা সবাই খুশি। ’

ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা হয়ে এক খুপরিতে একা থাকেন সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল মোতালিব। কম্বল পেয়ে তাঁর মুখেও হাসির ঝিলিক। তিনি বলেন, ‘পোলাপান সব দূরে গ্যাছে, আমি এলহা মানুষ ক্যামনে বাঁচি কেউ খোঁজ নেয় না। তোমরাই খোঁজ নিয়া কম্বল দিলা, মনডা খুশিতে ভইর্যা গ্যাছে। ’

নিঃসন্তান রোকেয়া খাতুনও কম্বল পেয়ে বলেন, ‘আমার মতো অসহায়দের খবর নেওয়ার কেউ নেই। কতজন?কে অনুরোধ করলাম একটা কম্বলের জন্য, কেউ দিল না, কিন্তু তোমরা আমা?কে কম্বল দিলে। ’ বয়োবৃদ্ধ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কদিন ধইরা শীতের ঠ্যালায় ঘুমাইতে পারি না। আজ কম্বল মুড়ি দিয়ে আরাম কইরে একটা ঘুম দিব। ’

মাদরাসাছাত্র হোসাইন আহমেদ বলে, ‘কম্বল পেয়ে আমরা আজ অনেক খুশি। আমরা যারা এখানে থাকি, শীতের রাতে আমাদের ঘুমাতে কষ্ট হতো। কম্বল পেয়েছি, আমরা এখন রাতে আরামে ঘুমাতে পারব। ’

মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাদরাসায় যারা পড়াশোনা করে তারা বেশির ভাগই এতিম ও দরিদ্র। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সব চাহিদা পূরণ করে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় ইনশাআল্লাহ আমাদের ছেলেদের কিছুটা হলেও ঠাণ্ডাটা লাঘব হবে। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের মঙ্গল করেন। ’

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, নরসিংদী জেলা পরিষদের সদস্য এ কে এম জহিরুল হক, ইসরাত জাহান তামান্না, শুভসংঘের মনোহরদী শাখার সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, শুভসংঘের সাবেক সভাপতি মো. হারুন-অর-রশিদ, কালের কণ্ঠ’র মনোহরদী প্রতিনিধি মুহা. ইসমাইল হোসাইন খান, নিউজটোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি হৃদয় খান, মনোহরদী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি জে এম শাহজাহান মোল্লা প্রমুখ।

শুভসংঘের মনোহরদী উপজেলা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা ব?লেন, ‘প্রতি শীত মৌসুমেই শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ ছাড়াও বিভিন্ন মানবিক কাজে ভূমিকা রেখে চলেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ’

নরসিংদী জেলা পরিষদ সদস্য এ কে এম জহিরুল হক বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। ’

কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘শীতার্তদের মধ্যে শুভসংঘের মাধ্যমে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার। এর অংশ হিসেবে মনোহরদী উপজেলার এক হাজার মানুষের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছি।

news24bd.tv/ইস্রাফিল