আলো জ্বলছে পাহাড়ে

সংগৃহীত ছবি

আলো জ্বলছে পাহাড়ে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

যে পাহাড়ে নেই কোনো উন্নতমানের সড়ক, নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ, সে পাহাড়েও এখন জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। এমন অসম্ভব সম্ভব হয়েছে সোলার প্যানেল সিস্টেমের কারণে।

বলা হচ্ছে, রাঙামাটি জেলার দুর্গম ১০টি উপজেলার ইউনিয়নগুলোর কথা। একটা সময় দুর্গম পাহাড়বাসীকে আলোর জন্য নির্ভর থাকতে হতো কেরোসিনের কুপি বাতি ও মোমবাতির ওপর।

কিন্তু কালের পরির্বতন আর সরকারের উন্নয়নে বদলেছে পাহাড়ের চিত্র। এখন রাতের পাহাড়েও দূর থেকে দেখা যায় জ্বল জ্বল করছে আলো। আলোয় আলোকিত হয়েছে পাহাড়বাসির জীবনও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির লংগদু, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় অন্ধকারের দীর্ঘ জীবনের অবসান হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে।

বর্তমান সরকারের সহায়তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পাহাড়ের আলোহীন ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় সোলার প্যানেল সিস্টেম। তাই এখন আলো জ্বলছে পাহাড়ে। শুধুই কি আলো? এ সোলারের মাধ্যমে চলছে টিভি, ফ্যান, ফ্রিজ, কম্পিউটার। সোলার বাতির আলোয় পড়া-লেখার সুযোগ পাচ্ছে বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীরা।

রাঙামাটি রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, সোলার প্যানেল পেয়ে পাহাড়বাসীদের জীবন যাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় আলোর জন্য অনেক কষ্ট করতে হতো। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে সোলার পেয়ে অন্ধকার বিদায় নিয়েছে। এ সোলারে সূর্য থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে তাই বিল দিতে হয় না। বাড়তি বিলের চাপ নিতে হয় না পাহাড়ের মানুষকে।

একই কথা জানিয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেরার ১নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল দেওয়ান বলেন, এ অঞ্চলে বেশ কিছু পরিবার এখনো সোলারের আওতায় আসেনি। তাদেরও যদি সোলারের আওতায় আনা যায়। এ অঞ্চল থেকে অন্ধকার দূর হয়ে যাবে।

রাঙামাটি লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচত্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল বশর বলেন, রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার সোলার প্যানেল প্রয়োজন। এ সোলার প্যানেল পেয়ে গেলে এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয় সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রম। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৪২ হাজার ৫০০ সোলার প্যানেল সিস্টেম বিতরণ করা হচ্ছে বিনামূল্যে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ৪০ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গেলো অর্থ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মিলে ১৫ হাজার ৬০০ সোলার প্যানেল সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে।

শুধু তাই নয় সোলারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপকারভোগীদের পর্যায়ক্রমে একদিন করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে ছয় শ টাকা করে ভাতাও দেওয়া  হচ্ছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবন মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার শেষ নেই। সরকার চাই পাহাড়ের মানুষ ভালো থাকুক। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হলো সৌরবিদ্যুৎ। বর্তমানে বিদ্যুতের এ আলো যেমন অন্ধকার পাহাড়কে আলোকিত করেছে, তেমনি পাহাড়ি অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারসহ পিছিয়ে পড়া মানুষের কাজের গতি বেড়েছে বহুগুণ। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

তিনি আরও বলেন, ৪০ হাজার হাউজ হোল্ডার দিয়ে যে সোলার বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে এমন প্রকল্প আরও নেওয়ার জন্য আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদন চাইবো।

news24bd.tv/SHS