প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে জীবন বদলে গেল বলরামের 

সংগৃহীত ছবি

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে জীবন বদলে গেল বলরামের 

অনলাইন ডেস্ক

বলরাম কর্মকার (৬৫)। ছেলে ও স্ত্রীর চিকিৎসায় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋনের টাকা পরিশোধ করেন। সেই থেকে তিনি পরিণত হন ভূমিহীনে।

সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ এই মানুষটি ভারত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পাইয়ে দেন। এই ঘরে তার শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। এই ঘরের সাথে পেয়েছেন ২ শতাংশ জমি।
এই জমির একটি কোনে কামার শালা স্থাপন করেছেন। এখানে দা, কাচি, বটি তৈরীসহ লোহার কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। সেই সাথে ছাগল ও হাঁস মুরগী পালন করছেন। আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন, ডাটাসহ সবজির আবাদ করেছেন। পঙ্গু ছেলে জয়দেব কর্মকারকে নিয়ে তার সংসার ভালই চলছে।

বলরাম কর্মকার গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঊনশিয়া গ্রামের মনোরঞ্জন কর্মকারের ছেলে।  

বলরাম কর্মকার বলেন, আমার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার ঊনশিয়া গ্রামের একজন বিখ্যাত কর্মকার ছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল ছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমি সংসারের হাল ধরি। আমার দোতলা টিনের ঘর ও ২ বিঘা মাঠের জমি ছিল। স্ত্রী ও ছেলে অসুস্থ হলে ঋণ করে তাদের চিকিৎসা করাই। স্ত্রী মারা যায়। ছেলে সুস্থ হয়। ঋণের দায়ে জমি,বাড়ি বিক্রি করে দেই। ভূমিহীন হয়ে আমার বাড়িতেই ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকি। ৫ ছেলের মধ্যে পঙ্গু ছেলে জয়দেব আমার সাথে রয়েছে। ৪ ছেলে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। ভিটেমাটি হারিয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তাই ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।  

পরে ইউপি চেয়ারম্যান দেড় বছর আগে আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পাইয়ে দেন। এই ঘরে বসবাস করছি। ঘরের পাশে কামারশালা করে লোহার কাজ করছি। পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে কাজ করে এখান থেকে সংসার চালানোর টাকা উপার্জিত হচ্ছে। এই আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার ভালভাবে চলছে। ছাগল-মুরগী পালন করছি। সেই সাথে আশ্রয়ণের আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন, ডাটা সহ সবজির চাষ করছি। আশ্রয়ণে ঘর পেয়ে  আমার জীবন এখন সমৃদ্ধ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতঞ্জতা প্রকাশ করছি। আমাকে তিনি নতুন করে বাঁচার অবলম্বন করে দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি পূজার সময় প্রার্থনা করি। ভগবান যেন তাকে দীর্ঘ জীবন দেন। সব সময় তাঁর সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।

বলরাম কর্মকারের প্রতিবেশি এনায়েত বিশ্বাস ও উজ্জ্বল ফারজী বলেন, বলরাম কর্মকার শেষ জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাড়িয়েছেন। একটি ঘর তার জীবনের গল্পকে বদলে দিয়েছে। তিনি হতাশা কাটিয়ে পৈতৃক পেশা আকরে ধরে  সমৃদ্ধ জীবন পেয়েছেন। তিনি হতাশা গ্রস্থ ও বৃদ্ধদের জন্য অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরেদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ১টি ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিয়েছেন। ঘর বিতরণের ক্ষেত্রে  প্রতিবন্ধী, অসহায়, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা  সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষকে আমরা আগ্রাধিকার দিয়েছি। তারপর ভূমিহীন ও গৃহহীন তালিকাভূক্ত সব পরিবারকেই আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়েছি। ঘর পেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির এসব মানুষ সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। তাই তারা উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, দেশে  কোন মানুষই ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৩৫টি ঘর বিতরণ করেছি। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাচ্যুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আরো ১২৯টি ঘর হস্তান্তর করবেন। এরমধ্য দিয়ে কোটালীপাড়া ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হবে।

news24bd.tv/আলী