ভুট্টা পাতা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিস্তা চরের কৃষকরা 

ভুট্টা পাতা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিস্তা চরের কৃষকরা 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা চর এলাকার কৃষকরা ভুট্টার পাতা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। কৃষকরা এখন তাদের ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে বাজারে এনে বিক্রি করছেন। এতে বাড়তি আয় করে কেউ কিনছেন চাউল, কেউ কিনছে তেল, আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

সরেজমিনে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লারহাট, ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, শিমুলতলা, হাটখোলা, বড়খাতাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ  ভুট্টা পাতার হাট বসছে।

তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরে চাষ করা ভুট্টার পাতা ছিঁড়ে ভ্যান ও গরুর গাড়িতে করে বিভিন্ন হাঁট-বাজারে প্রতি আটি ৫ থেকে ১০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে একজন করে কৃষক প্রতি হাঁটে দুই থেকে তিন হাজার টাকার ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে।

কৃষকরা বলেন, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভুট্টা তোলা শুরু হবে। এর মধ্যে গাছের পাতা ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করছি।

আমরা বাড়তি লাভবান হচ্ছি। যাদের বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া রয়েছে তারাই আমাদের কাছ থেকে এই ভুট্টার পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।  ভুট্টার পাতা বিক্রি করে প্রতিদিনের বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছে কৃষকরা।

জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ব্যান্ডিং ফসল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে ভুট্টা। প্রতিবছর লালমনিরহাট জেলায় প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা চাষাবাদ হয়। লালমনিরহাট জেলার মানুষ ভুট্টা চাষ করে অর্থনীতিতে বদলে গেছে এ অঞ্চলের মানুষ।

এদিকে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে ভুট্টা তোলা ধুম পড়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে। কৃষকরা আগাম ভুট্টার পাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। কৃষকরা আশা করছেন, যেভাবে সার, বীজ, কীটনাশক, তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী ভুট্টার প্রতিমণ ১৫শ থেকে ১৭ টাকা হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লারহাটে পাতা বিক্রি করা আসা সাদিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরের প্রায় ৩ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই ভুট্টা তুলবো তাই পাতা ছিঁড়ে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করছি। এতে আমাদের বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে। প্রতি দিনে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি করি। এই টাকা আমাদের সংসার এর বিভিন্ন কাজে লাগছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা আকবর আলি (৫০)  বলেন, বর্তমানে কোন কাজ কাম হাতে নাই। তাই তিস্তার চরে গিয়ে নিজের জমির ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছি। প্রতি আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

তিনি আরো বলেন, ভুট্টা চাষ করে আমরা দিনদিন লাভবান হচ্ছি। ভুট্টা গাছ, পাতা এবং ফল খুবই মূল্যবান।

কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লারহাটের আইয়ুব আলী বলেন, দিনদিন বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি হচ্ছে। গরিব মানুষের অবস্থা খারাপ। তিস্তার চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে সংসার চালাচ্ছি।  

ভুট্টার পাতা কিনতে আসা টিটুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে তিনটি গরু ও দুইটি ছাগল রয়েছে। প্রতিদিনই গরু ছাগলের খাবারের জন্য ভুট্টার পাতা কিনি। কম দামে ভুট্টার পাতা বিক্রি হয় তাই বাজারে মুহূর্তেই ভুট্টার পাতা বিক্রি হয়।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার ফলন উঠার আগে গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেললে তা কোন ক্ষতি হয় না। এই পাতার গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেক কৃষক ভুট্টার পাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা বরাবরই বিভিন্ন সেমিনারে বলছি কৃষকরা যাতে তামাক চাষ না করে ভুট্টা চাষ করেন এ বিষয়ে আমরা সবসময়ই পরামর্শ দিচ্ছি।