অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজার বিধান

সংগৃহীত ছবি

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজার বিধান

অনলাইন ডেস্ক

রোজা আল্লাহর ফরজ বিধান। ইসলামে মানুষের শক্তি, সামর্থ্য ও সাধ্যের বাইরে কোনো বিধান দেওয়া হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

অনেকে না জানার কারণে কঠিন অসুস্থ হয়েও রোজা রাখেন।

অথচ ইসলামী শরিয়ত তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। আবার অনেকে সামান্য অসুস্থতার অজুহাতে রোজা রাখতে চান না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করে রোজা রাখা যায়। এখানে তা উল্লেখ করা হলো-

কোনো ধরনের ইনজেকশন, ইনসুলিন বা টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হয় না, এমনকি গ্লুকোজ ইনজেকশনের দ্বারাও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।

(ফাতাওয়ায়ে ওসমানি : ২/১৮৬)

রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহারের দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হবে না, যদিও ওষুধের স্বাদ মুখে অনুভূত হয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/২০৩)

কানে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে কান ও গলার মধ্যে সরাসরি কোনো সংযোগ নেই, যা পাকস্থলীতে নিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে মুফতি রফি উসমানী (হাফিজাহুল্লাহ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ি’তে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। তাই এ কথা বলা যায় যে রোজা অবস্থায় কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। (মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ি)

দেহের অভ্যন্তরীণ রোগ-ব্যাধি নির্ণয় করার জন্য এনডোসকপি করা হয়। এ সময় গলা দিয়ে পেটের ভেতরে পাইপ প্রবেশ করানো হয়। যদি এই পাইপে তেল, পানি বা অন্য কোনো পদার্থ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি তেল বা কোনো পদার্থ লাগানো না থাকে, তাহলে এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৬৯)

রোজা অবস্থায় কোনো ধরনের মেডিসিন ছাড়া অক্সিজেন গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। আর যদি অক্সিজেন কোনো ওষুধ মিশ্রিত থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফেকহি মাসায়েল : ১/৮৮)

রোজার দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে শরীরে স্যালাইন পুশ করা মাকরুহ। তবে রোগের কারণে শরীরে স্যালাইন নেওয়া যাবে। এতে রোজা ভাঙবে না। (আল ইসলাম ওয়া তিব্বুল হাদিস, পৃষ্ঠা ২৮৫)

রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির : ৪/৩২৭)

রোগের কারণে ডাক্তার যদি বলে, এ রোজার কারণে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বা সুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে, তাহলে রোজা ভাঙা যায়। কিন্তু সামান্য অসুখ, যেমন-মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি অনুরূপ কোনো সাধারণ রোগ-বালাইয়ের কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়। মনে রাখতে হবে, রোগের কারণে যেসব রোজা ভঙ্গ হয়, সেগুলো পরে একটির বদলে একটি করে কাজা করে নিতে হবে।

রোজা পালনে রোগ বৃদ্ধি পেলে পরহেজগারি মনে করে রোজা পালন করা অনুচিত। এ অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)

অতিশয় বৃদ্ধের জন্য রোজা পালন জরুরি নয়। তবে ওই ব্যক্তি অন্য কাউকে দিয়ে কাজা আদায় করাবে বা ফিদিয়া দেবে। প্রতিটি রোজার জন্য একজন মিসকিনকে এক বেলা খাবার খাওয়াবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...শক্তিহীনদের কর্তব্য হচ্ছে ফিদিয়া দেওয়া, এটা একজন মিসকিনকে অন্নদান করা...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

মৃত্যুমুখী বৃদ্ধলোক অথবা এমন রোগে আক্রান্ত হলে, যা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এমন অক্ষম ব্যক্তি প্রতিটি রোজার পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম (ফিতরার পরিমাণ) অথবা তৎপরিমাণ মূল্য আদায় করবে। ইসলামের পরিভাষায় এটাকে ফিদিয়া বলা হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৯)