শুনুন, এক মমতাময়ী মায়ের গল্প

সংগৃহীত ছবি

শুনুন, এক মমতাময়ী মায়ের গল্প

অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল

‘মা’ যে কতোটা মমতাময়ী হতে পারেন তা জীবনের প্রথমেই নিজের মাকে দিয়ে বুঝেছি। এ কথাটা নিশ্চয় সবাই মেনে নিবেন। জীবনের এই মধ্য গগনে এসে বুঝলাম, বাংলাদেশে প্রথম ক্যাডাভারিক ডোনার প্রয়াত সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানাকে দেখে।  

এবার শুনুন আরেক মমতাময়ী মায়ের গল্প।

 

চলতি বছর (গত ১৮ জানুয়াার) ব্রেন ডেথ রোগীর দেহ থেকে কিডনি ও কর্নিয়া বিযুক্ত করে সফল ভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বদ্যালয়। যার নেতৃত্বে ছিলাম আমি। মহান সৃষ্টিকর্তা আসলে আমাকে এ এক বিরল সুযোগ করে দিয়েছিলেন।  

মাত্র বিশ বছর বয়সে জীবনপথের যাত্রা থেমে যায় সারাহ ইসলামের।

সদ্য কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে উঠা সারাহ ইসলাম ব্রেন ডেথ রোগী হয়ে আমাদেরকে এই অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার সুযোগ দান করে। এটা ছিল আমাদের গত ৩০ বৎসরের সাধনার ফল।  

প্রথম অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নাম চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বন্ধ দরজা খুলে দিয়ে যান সারাহ ইসলাম। বর্তমানে তার কারনেই মরনোত্তর অঙ্গদানে বাংলাদেশে বিশাল সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে আরেক জনের অবদান অনস্বীকার্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রতিনিয়ত আমাদেরকে প্রেরণা জুগিয়েছেন এই কঠিন কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য।

এরই ধারাবাহিকতায় ৩ এপ্রিল সোমবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে উপচার্য স্যারের নেতৃত্বে একটি টিম গণভবনে গিয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে গণভবনে গিয়েছিলেন সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা ও সারাহ ইসলামের কিডনি গ্রহীতা শামীমা আহমেদ।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন দক্ষ প্রশাসক নন, একজন মমতাময়ী মা ও। উনার সঙ্গে সাক্ষাতের পুরোটা সময় (প্রায় ৪৫ মিনিট) তিনি পুরো বিষয়টিকে এমন গভীরভাবে ধারণ করলেন এবং আমাদের উৎসাহিত করলেন, যা ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার। সারাহ ইসলামের মা এবং কিডনি গ্রহীতাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জড়িয়ে ধরলেন। তিনি যেভাবে জড়িয়ে ধরলেন, তা আসলে এক স্বর্গীয় ব্যাপার! তা কেবল একজন মমতাময়ী মায়ের পক্ষেই সম্ভব।

May be an image of 3 people, people standing and indoor

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডানদিকে সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা ও

বাম দিকে সারাহ ইসলামের কিডনি গ্রহীতা শামীমা আহমেদ 

আমি প্রিয় নেত্রীকে জানালাম, বর্তমানে রোগীর প্রতিমাসে ৭০/৮০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আমার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সেই টাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ভবিষ্যতে এই ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামকে সফল করার জন্য ৪টি প্রস্তাবনা দেওয়া হলো আমাদের পক্ষে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই তা মঞ্জুর করলেন।  

সেই মমতাময়ী মায়ের প্রতি রইল আমাদের আর্শীবাদ ও শুভকামনা। আমরা আমাদের এই প্রক্রিয়াকে জনপ্রিয় করে লাখ লাখ অঙ্গ বিকল রোগীদের আশার আলো দেখাতে চাই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।

লেখক : সভাপতি, ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল
প্রক্টর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বদ্যালয়।