প্রবল শক্তি নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় মোখা। এটির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার (১৪ মে) সকালে শক্তি বাড়িয়ে এটি ১৮০-২০০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় মূল আঘাতটা করবে মোখা।
কক্সবজারের টেকনাফ, উখিয়া, কুতুপালংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস। যারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে সে দেশ থেকে পালিয়ে এসে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝড়ের আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টির করণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। পাশাপাশি ঘরবাড়িগুলো কাদায় দুর্বল হয়ে পড়বে। তার ওপর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়তে পারে ঘরগুলো। এখন এত বড় সাইক্লোন রোহিঙ্গা শিবিরে আছড়ে পড়লে আদৌ ঝুপড়ি ঘরগুলোর কোনো অস্তিত্ব থাকবে কি না বা রোহিঙ্গাদের প্রাণ কতটা সংকটাপন্ন হতে পারে- তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সবার মানে।
আরও যেসব ক্ষতি হতে পারে
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
মোখার প্রভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে জলোচ্ছ্বাস। ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার যে জলোচ্ছ্বাস, এই জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রথমত দ্বীপের সম্পূর্ণটাই প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই নম্বর হচ্ছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এই যে ছোট ছোট দোকানগুলো যেগুলো আছে, আমরা জানি, বিভিন্ন শুটকির দোকান, এই যে কসমেটিকসের দোকান রয়েছে এবং খেলনা বা অন্যান্য, এগুলো পুরো একদম ভেসে যাবে। আর এর পরে হচ্ছে যে, জেলেপল্লির যে বাড়িঘরগুলো, যেগুলো বাঁশ এবং কাঠের তৈরি, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে পুরোপুরি।
আর সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে (ঘূর্ণিঝড়) আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দ্বীপটার প্রচণ্ড অংশ ভেঙে যাবে, ধসে যাবে। ঠিক আছে? এটা ক্ষয় হয়ে যে ভাঙনের সৃষ্টি হবে দ্বীপে, জানি না ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হবে, কিন্তু যেটা আশঙ্কা, ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতি হবে দ্বীপের পুরো অর্ধেক অংশ ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ করে, পূর্ব দিক থেকে, যেই দিক থেকে বাতাস আসবে, সেই দিকের অংশের হচ্ছে পুরোটাই মানে এই গতিবেগের বাতাসের আঘাত কখনোই হয়নি এর পূর্বে।
আমরা জানি, দ্বীপের ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছি গত ১০-১২ বছরে বিভিন্ন প্রকারে। দ্বীপের গাছপালা কেটে ফেলে দ্বীপের একদম গোড়া পর্যন্ত মাটি কেটে বিল্ডিং তৈরি করছি। অর্থাৎ এতে যেটা হবে, দ্বীপের মধ্য দিয়ে বাতাসের চলাচলটা সমস্যা হবে এবং এই কারণে দ্বীপের একদম যে কিনারায়, অর্থাৎ বন্ধ করে যে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ এই স্থাপনাগুলো একটাও থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
আর এর পরে যেটি হচ্ছে যে, দ্বীপের চতুর সাইডে যে জাহাজগুলো আছে, যে জেলে নৌকাগুলো, সে নৌকাগুলোর পুরোটাই হারিয়ে যাবে। যত শক্তিশালী চেইন দিয়ে বাঁধা হোক না কেন, এগুলো পুরোটাই ভেসে যাবে। কোথায় যাবে, এগুলোর কোনো ঠিক নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম
ঘূর্ণিঝড়ের একটা অংশ রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়েও অতিক্রম করবে। বিশেষ করে বান্দরবান জেলার ওপরে পাহাড় ধসের একটা সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রাম শহরেও অনেক পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বৃষ্টির কারণে।
উপকূলীয় অঞ্চল
উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যে উপকূলীয় জেলাগুলো, বরিশালের ভোলা, তারপরে হচ্ছে বরগুনা, তারপরে হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, ফেনী, দ্বীপ যে এলাকাগুলো চট্টগ্রামের (বিভাগের), এগুলো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া; নোয়াখালীর হাতিয়া এবং সন্দ্বীপ- এ দ্বীপগুলো ক্ষতির অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
আম ও ধানের ক্ষতি
জানা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং আশেপাশের এলাকায় ধানগুলো এখানো পুরোপুরি কাটা হয়নি। সেই ধান কাটা নিয়ে শঙ্কা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ফলমূল চাষ বেশ জনপ্রিয়। এখন ফলের মৌসুম, আম ঝরে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ফলজাতীয় যে শস্যগুলো, সেগুলো আসলে অনেক বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার শহর
কক্সবাজারের যে ফিশারিঘাট, সেই ফিশারিঘাটে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে আমাদের কক্সবাজারে যেহেতু ঘূর্ণিঝড়টি অনেক শক্তিশালীভাবে আঘাত করবে, সে ক্ষেত্রে আসলে কক্সবাজার সি বিচে, এখানেও অনেকটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আমি জানি না বর্তমানে এখানে স্ট্রাকচারগুলো কী অবস্থাতে, বাট ঘূর্ণিঝড়টা কক্সবাজার জেলা শহর বা বিচে, এদিকেও ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে আঘাতের সম্ভাবনা আছে। সেই ক্ষেত্রে এখানে আসলে, শহরের ভেতরেও অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
news24bd.tv/আইএএম