আবারো বর্ণবাদী আচরণের শিকার ভিনিসিয়ুস, উত্তাল বিশ্ব ফুটবল

সংগৃহীত ছবি

আবারো বর্ণবাদী আচরণের শিকার ভিনিসিয়ুস, উত্তাল বিশ্ব ফুটবল

অনলাইন ডেস্ক

এবারই প্রথম নয়। স্প্যানিশ লা লিগায় এ মৌসুমে বেশ কয়েকবার বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। মায়োর্কা, রিয়াল ভায়াদোলিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, বার্সেলোনার পর গতকাল ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হলেন ভিনিসিয়ুস। যা নিয়ে তোলপাড় পড়েছে বিশ্ব ফুটবলেই।

ভ্যালেন্সিয়ার মাঠ মেস্তায়ায় গতকাল স্বাগতিকদের বিপক্ষে ০-১ গোলে হারে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সেই হার ছাপিয়ে আলোচনায় শুধুই বর্ণবাদ।

ম্যাচের ইনজুরি সময়ে প্রতিপক্ষ ফুটবলারের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভিনিসিয়ুস। তার আগে ম্যাচের শুরু থেকেই মেস্তায়ায় আসা ভ্যালেন্সিয়া সমর্থকদের লক্ষ্যে পরিণত হন এই উইঙ্গার।

গ্যালারি থেকে ধেয়ে আসতে থাকে একের পর এক বর্ণবাদী মন্তব্য। একটা পর্যায়ে ভিনি নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেননি। একবার তো মাঠেই কেঁদে ফেলেন তিনি। এরপর সাইড লাইনে সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

সেই ঘটনার রেশ ধরেই শেষ দিকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপর ম্যাচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। তার সেই ক্ষোভের পুরোটা জুড়েই ছিল বর্ণবাদের ঘটনা নিয়ে। তার ক্ষোভ থেকে রেহাই পায়নি স্পেনের জনগণ এবং লা লিগা কর্তৃপক্ষও।

ম্যাচ শেষে ২২ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার টুইটারে লেখেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়। বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। ’

ভিনিসিয়ুসের এই বক্তব্যের পর লা লিগার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

আবারও বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট আচরণের শিকার হওয়ার পর ভিনিসিয়ুসের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। ভিনির জাতীয় ও ক্লাব দলের অনেক সতীর্থই তাকে শক্ত হতে বলেছেন। নেইমার জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পে, লুকাস পাকুয়েতা, আশরাফ হাকিমি, রিচি জেমস, রিয়াদ মাহরেজরা টুইট করেছেন ভিনিকে নিয়ে। ব্রাজিলের প্রায় প্রত্যেকটি ক্লাব পাশে দাঁড়িয়েছে ভিনির। বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার পর বিবৃতি দিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও।

যেখান থেকে বাদ যাননি স্বয়ং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ব্রাজিলে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বদেশি ফুটবলারের উদ্দেশে লুলা দা সিলভা বলেছেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও সে জীবনে সফল হয়েছে। ওর বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্যই সে রিয়াল মাদ্রিদের সেরা। অথচ সে যে স্টেডিয়ামেই খেলতে যাচ্ছে, আক্রমণ করা হচ্ছে। ’

ভিনিসিয়ুসকে রক্ষা করতে ও বর্ণবাদী আক্রমণ বন্ধ করতে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ‘আমার মনে হয়, ফিফা, স্প্যানিশ লিগ ও অন্য দেশগুলোর লিগ কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ফুটবল স্টেডিয়ামে ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদকে আমরা আধিপত্য বিস্তার করতে দিতে পারি না। ’

বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার পর ভিনিসিয়ুস যেমন সর্বস্তর থেকে সমর্থন পাচ্ছেন, সেখানে আবার উল্টো ভিনিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন, বর্ণবাদ বিষয়ে ভিনিসিয়ুস তাদের যথাযথ সহযোগিতা করছেন না। যার জবাবে পাল্টা টুইট করেছেন ভিনিসিয়ুসও।

লা লিগা সভাপতি তেবাসের শুরুতে ভিনিসিয়ুসের টুইটের জবাবে লেখেন, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগা কী করে এবং করতে পারে, এ বিষয়ে যেহেতু ব্যাখ্যা করা হয়নি, আমরা আপনাকে সেটা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেরই অনুরোধ করা নির্ধারিত দুটি তারিখে আপনি উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা ও অপমান করার আগে নিজের সম্পর্কে সঠিকটা জানা উচিত। নিজেকে অন্যের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার হতে দেবেন না। নিশ্চিত করুন যে উভয় পক্ষের কর্মদক্ষতা এবং আমরা একত্রে যা করছি, সে সম্পর্কে আপনার সম্পূর্ণ জানাশোনা আছে। ’

লা লিগা সভাপতির এমন মন্তব্য ভালো লাগার কথা নয় ভিনিসিয়ুসের। তেবাসের টুইটের দুই ঘণ্টা পর পাল্টা জবাবও দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, ‘বর্ণবাদের সমালোচনা করার বদলে আবারও লা লিগা প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করলেন। আপনি যত কথাই বলুন, কিছু না পড়ার ভান করুন, আপনার চ্যাম্পিয়নশিপের সুনামে ধাক্কা লেগেছে। আপনার পোস্টের নিচের মন্তব্য দেখুন, অবাক হবেন...। (এ বিষয় থেকে) আপনার নিজেকে সরিয়ে নেওয়া বর্ণবাদেরই সমান্তরাল। আপনি আমার বন্ধু নন যে বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলব। আমি চাই ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তি। হ্যাশট্যাগে আমার কিছু যায় আসে না। ’

news24bd.tv/SHS