সানজিদার মৃত্যু নিয়ে রহস্য, দেড় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি 

সানজিদার মৃত্যু নিয়ে রহস্য, দেড় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি 

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি 

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে গৃহবধূ সানজিদা বেগমের (২৩) মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা উল্লেখ থাকলেও সানজিদাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তবে পুলিশ বলছে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পলাতক থাকলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহতের বড় বোন সাহিদা বেগম জানান, মুকসুদপুর উপজেলার চরভাটরা গ্রামে জমি জমা নিয়ে মৃত মুখলেছ চোকদারের পরিবারের সাথে সানজিদার বাবা মো. ইলিয়াছ শেখের সাথে বিরোধ ছিল। পরে এই রিবোধ মেটানোর জন্য সানজিদার সাথে মৃত মুখলেছ চোকদারের পরিবার ছাব্বির চৌকদারের (২৩) বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে গত ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর সানজিদার সাথে ছাব্বির চৌকদারের বিয়ে হয়।

বি‌য়ের পর থেকে সানজিদার উপর নেমে আসে নির্যাতন।

বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য সানজিদার উপর নির্যাতন চালাতো স্বামী ছাব্বির চৌকদার ও তার পরিবারে লোকজন। এর জের ধরে ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল সানজিদা আত্মহত্যা করেছে এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে সানজিদার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে সানজিদাকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন মরদেহ ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সানজিদার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ খবর দেয়। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠালে সানজিদা আত্মহত্যা করেছে বলে মায়নাতদন্তের রিপোর্ট দেয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে সানজিদার শ্বশুর বাড়ীতে গেলে বাড়ী তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এমনকি সানজিদার স্বামী ছাব্বির চৌকদারের ব্যবহারিত মোবাইল ফোনে ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তারা কোথায় গেছেন সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি এলাকাবাসী। তবে এলাকাবাসী ধারণা করছে সানজিদার স্বামী বিদেশে পালিয়ে গেছে।

সানজিদার ভাই সাইফুল ইসলাম টুটুল বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনের উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন চালানো হতো। বিষয়টি আমি জেনে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। ময়নাতদন্তে আমার বোন আত্মহত্যা করেছে বলে রিপোর্ট দেয়। আমি মনে করি এ রিপোর্ট ভুল। এমনকি কোন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আমরা মনে করি সানজিদার স্বামী কাতার চলে গেছে। আমি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।

সানজিদার বাবা মো. ইলিয়াছ শেখ বলেন, আমার মত কোন বাবা যেন তার মেয়েকে না হারায়। আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এলাকাবাসী নাসিমা বেগম বলেন, সানজিদা আত্মহত্যা করতে পারে না। সানজিদার মত ভাল মেয়ে হয় না। বিয়ের পর তার উপর নির্যাতন চলতো। সানজিদাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। এমনকি সানজিদার বাবার বাড়ীর লোকজন লুটপাট করেছে এমন অভিয়োগও মিথ্যা।

এলাকাবাসী সোহানা বেগম বলেন, সানজিদা অনেক ভাল মেয়ে ছিল। সবার সাথে মিশতো, হাসি খুশি থাকতো। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সানজিদাকে বাইরে বের হতে দিতো না। এমনকি সানজিদার পরিবারের উপর লুটপাটে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। আমরা সানজিদা হত্যার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে পলাতক থাকায় আসামি গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

news24bd.tv/রিমু