কেউ ডেকে মাংস দেয়, কেউ দারোয়ান দিয়ে তাড়িয়ে দেয়

সংগৃহীত ছবি

কেউ ডেকে মাংস দেয়, কেউ দারোয়ান দিয়ে তাড়িয়ে দেয়

অনলাইন ডেস্ক

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। চিরায়ত এ কথার গভীরেও গোপন থাকে গরিবের কষ্টগাঁথা। তাইতো উৎসবের এ বিশেষ দিনেও তাদের গিয়ে দাঁড়াতে হয় বিত্তবানদের দুয়ারে। হাত পাততে হয় দু-এক টুকরো কোরবানির মাংসের জন্য।

সেখানেও তাদের কখনোবা হতে হয় বিব্রত ও অপমানিত। কিন্তু তারা অপারগ। পকেটের টাকায় মাংস কেনার সাধ্য তাদের নেই। এ কারণেই ঈদের দিনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করেন কোরবানির পশুর মাংস।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ির সামনে চোখে পড়েছে নিম্নবিত্ত তথা দরিদ্র মানুষের জটলা।

‘বাবা, অনেক দূরের থেকে আইছি। আমিন বাজার থেকে রাইয়ানখোলা হাঁইটা আইছি। ঈদের দিন, একটু মাংস নেওয়ার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে যাইতেছি। মাংস বেশি পাইলে কিছু রানমু, কিছু বিক্রি করমু। ’

রাজধানীর মিরপুরে রাইয়ানখোলা মোড়ে একটি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন জমিলা বেগম। স্বামী ও দুই ছেলে ছোটখাট কাজ করেন। তবে প্রতি বছর কোরবানির ঈদের দিন মানুষের দ্বারে মাংসের জন্য যান জমিলা। তার সঙ্গে একই এলাকার আরও কয়েকজন থাকেন। ঈদের দিন রাত পর্যন্ত চলে তাদের মাংস সংগ্রহ। এরপর বাড়ি ফিরে রান্না করেন সেই মাংস। অনেকে বাড়তিটুকু বিক্রি করে দেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঢাকায় সকাল থেকেই বৃষ্টি। ঈদের দিন জমিলার মত যারা দিন আনে দিন খায় তারা অপেক্ষায় থাকেন কখন বিত্তবানরা কোরবানির মাংস বিতরণ করবেন। বিভিন্ন এলাকার বাসায় ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষ সেই মাংস সংগ্রহ করে বাসায় এনে নিজে খাবেন এবং পরিবারের মুখে তুলে দেবেন।

তবে এবছর ঈদের দিন সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় মাংস সংগ্রহ করতে গিয়ে নিম্নবিত্তের মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাদের অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন বাসার গেটের বাইরে মাংস বিতরণ শুরুর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। এছাড়া বৃষ্টির কারণে এবার ঢাকার মানুষের পশু কোরবানি করতেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

কোরবানির ঈদে ঢাকায় অনেক বছর ধরে মাংস সংগ্রহ করেন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক সফিক মিয়া। মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

সফিক বলেন, ঈদে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে মাংস সংগ্রহ করি। গত ঈদে প্রায় ৪-৫ কেজি মাংস পাইছি। সবটুকুই বাসায় নিয়ে রান্না করে খেয়েছি। ঈদে সবাই কম-বেশি দেয়। এই সময়ে একটু মাংস খাওয়া হয়। সারাবছর তো কিনতে পারি না। মাংস কেনার মত পয়সা হয় না।

পল্লবী এলাকায় মাংস সংগ্রহ করতে দেখা যায় মায়া বেগম নামের এক নারীকে। তিনি  বলেন, বাসাবাড়িতে কাজ করি। যা পাই পরিবার চালাইতে গিয়া শেষ হয়্যা যায়। মাংস কেনার সামর্থ্য আমাগো নাই। বছরের এই একটা দিন পেট ভরে মাংস খাইতে পারি। এক বাসা থেকে অন্য বাসায় ঘুরছি দু-চার টুকরো মাংসের আশায়।

তিনি বলেন, অনেক বড়লোক মানুষ আমাদের ডেকে ডেকে মাংস দেয়। অনেকে আবার দারোয়ান দিয়ে তাড়িয়েও দেয়। আমরা তো গরিব। যে যা-ই বলুক, কাউরে কিছু কইবার পারি না।

ছিন্নমূল শিশু নার্গিস জানান, মাংস বেশি হলে বিক্রি করে দিতে হয়। আমাগো তো ফ্রিজ নাই। গত বছর আমি আর মা মিলে ৮ কেজি মাংস পাইছিলাম। পরে ৩-৪ কেজি বিক্রি করে দিছি।

কোরবানিদাতা অনেকে বলছেন, ঈদের দিন ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মাংস দিতে গেলে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ঝামেলা এড়াতে অনেকেই মাংস বিতরণের জন্য দারোয়ানকে দায়িত্ব দেন।
News24bd.tv/aa