১৯৭২ সালে ৫ সেপ্টেম্বর এক আদেশের মাধ্যমে ২০% সাধারণ কোটা এবং ৮০% জেলা কোটা যার মাঝে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০% ক্ষতিগ্রস্থ নারী কোটা ও ৪০% জেলা কোটা রাখা হয়। সম্ভবত ১৯৭৩ সালে আনুমানিক ১৩২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্যাডার নন-ক্যাডার চাকরিতে জয়েন করানো হয়। যদিও ১৯৭৯ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে পদোন্নতি পাননি তেমন কেউ।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নেমে আসে কালো অন্ধকার।
যদিও ১৯৮৫ সালে কোটা সংস্কার করে ৪৫% সাধারণ কোটা এবং ৫৫% জেলা কোটা-(৩০% মুক্তিযোদ্ধা, ১০% মহিলা কোটা,৫% উপজাতি, ১০% জেলা কোটা) করা হয়।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের দল ক্ষমতায় আসলো। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার স্বপ্ন দেখলো ভালোভাবে বেঁচে থাকার।
কিন্তু সরকার বার বার লক্ষ্য করছেন কোনো অবস্থাতেই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে না, কারণ ৭৫-৯৬ এর মাঝে নিয়োগকৃত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলা ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ১০/৯/১৯৯৮ সালে সরকার আরেকটি পরিপত্র জারি করে যথাযথভাবে কোটা অনুসরণ এবং কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি রাখা এবং খালি পদগুলো পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে আদেশ জারি করে।
ক্ষমতায় আওয়ামী-লীগ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রশাসন কোটা নীতি অনুসরণ করছে না। ৭ জুন ১৯৯৯ সালে সরকার আবার আদেশ জারি করলেন যার বিষয় ছিল এমন আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো ভাবেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হচ্ছে না তাই কোটা যথাযথ ভাবে পুরণ করার পুনরায় আদেশক্রমে অনুরোধ করা হলো এবং ১০/৯/৯৮ সালের আদেশ জারির পর মোট কতজন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে -এর মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কতজন তা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু মাঝের ২১ বছরের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলারা সরকারের কথা মানেনি। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে সরকার আবার আদেশ জারি করেন, এবং কড়া ভাষায় নির্দেশনা দেন, বলেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের ঢুকানো হচ্ছে যা দুঃখজনক এবং সরকার এখানে স্পষ্ট বলেন ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংক্রান্ত সরকারি আদেশ প্রতিপালিত না হলে নিয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলারা সরকারের কোনো কথায় মানেনি। ৫ জুন, ২০০০ সালে সরকার ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথ ভাবে পালনের কঠোর আদেশ দেন এবং স্পষ্ট বলে দেন অন্য প্রার্থী দ্বারা কোটা পুরণ করা যাবে না। সরকারের কথা শুনলে তো, ২৮ জুন, ২০০০ সালে সরকার আবার আদেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথ ভাবে অনুসরণ করার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলারা সরকারি আদেশ মানেনি। ১৭ জুন, ২০০২ সালে সরকার আবার আদেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করতে কোন রকম ব্যত্যয় যাতে না ঘটে এবং তা সকল বিভাগকে নির্দেশ দেন এবং কত % কোটা অনুসরণ করা হচ্ছে তা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন চাওয়া হয় বিভাগ গুলোর কাছে।
ঠিক ১৯৯৬ সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করার জন্য এমন ৮/১০ টার মতো পরিপত্র জারি করা হয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আমলারা তা মানেনি যা পরিপত্র গুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে।
আবার সরকার পরিবর্তন, জোট সরকার ক্ষমতায়। ৪ সেপ্টেম্বর,২০০২ সালে আবার কোটা সংশোধন। আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে জারি করা কোটা সংরক্ষণ ও কোটা অনুসরণে বাধ্যবাধকতা থাকায় ১৯৯৮,১৯৯৯, ও ২০০০ সালে জারিকৃত পরিপত্র সংশোধন করে বলা হলো কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে নিতে হবে। এ পরিপত্রের অজুহাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাশ করার পরও বাদ দিয়ে দেওয়া হতো। ২০০০ সালে ২০তম বিসিএস অনুষ্ঠিত হওয়ায় কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ক্যাডার হয়েছিল কিন্তু ২১তম থেকে আবার বঞ্চিত। এভাবেই আবার জোট সরকারের আমলে ৫ বছর বঞ্চিত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। ২০০৭ থেকে কেয়ারটেকার সরকার, চলল আরো ২ বছর নিয়োগ নাই।
তাহলে কত বছর বঞ্চিত হলো নিয়োগ ছিলনা বললেই চলে ৭১-৭৫ =৪ বছর,৭৫-৯৬=২১ বছর, ৯৬-২০০১ লীগ ক্ষমতা থেকে কোটা অনুসরণে চেষ্টা করেও ব্যর্থ ৫ বছর,২০০১-২০০৮ আবার নিয়োগ বঞ্চিত ৭ বছর আর কোটা বাতিল হলো ৫ বছর, তাহলে মোট ৪২ বছর। দেশের বয়স চলে ৫২ বছর এর মাঝে ৪২ বছর মুক্তি পরিবার বঞ্চিত হলো আর মাঝের ১০ বছর কোটার কার্যকারিতা ছিল মাত্র ৫/৬% কিন্তু আমাকে কোটার সুবিধার দায়ভার নিতে হলো ৫২ বছরের।
লেখক: সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল