মুন্সীগঞ্জে আটক তিন জঙ্গি ৫ দিনের রিমান্ডে

মুন্সীগঞ্জে আটক তিন জঙ্গি ৫ দিনের রিমান্ডে

অনলাইন ডেস্ক

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন জঙ্গি নেতাকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৬ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে শুনানি শেষে মুন্সীগঞ্জ আমলী আদালত-৬'র বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার এ আদেশ দেন।

আসামিরা হলেন- জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (৩২), কাজি সিরাজ উদ্দিন (৩৪) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে বিজয় (২৮)।  

মুন্সীগঞ্জ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, দেশের আর কোথায় তাদের জঙ্গি সদস্যরা আছেন, তাদের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন।

আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ যে কোনওদিন তাদের রিমান্ডে নিতে পারবে।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বেলা ৩টার দিকে আসামিদের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হলে বিকাল ৩টায় রিমান্ড শুনানি হলে গতকাল বুধবার আবারও রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে জঙ্গিদের জেলহাজতে পাঠিয়েছিল আদালত।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকার কথা বলে ৬ হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত সোমবার ভোরে ওই তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০ এর একটি দল। এ সময় জঙ্গিদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রপন্থী বই ও টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে র‍্যাব।

এদিন র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, জঙ্গি সংগঠনের আমির আনিসুর জামাতুল আনসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পড়া শেষ করে তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার একটি সিএনজি পাম্পে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন। এর আগে তিনি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যও ছিলেন। চাকরি করার সময় কুমিল্লার একটি খাবারের দোকানে জামাতুল আনসারের আমির মাইনুল ইসলাম (রক্সি) ও ফেলানি নামে দুই সদস্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

র‍্যাব জানায়, ২০২১ সালে মাইনুল গ্রেপ্তার হলে আনিসুর আমির হন। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তার সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের পরিচয় হয়। এই সূত্র ধরে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়। আনিসুরের নির্দেশনায় জামাতুল আনসারের জন্য কেএনএফের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। এসব অস্ত্র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আটজন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তাদের খুঁজতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পার্বত্য এলাকা ও সমতলের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জঙ্গি সংগঠনের ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে জামাতুল আনসারের শুরা সদস্য, সামরিক শাখা, অর্থ শাখা, মিডিয়া ও দাওয়াতি শাখার প্রধান রয়েছেন।

র‍্যাবের তথ্যমতে- গ্রেপ্তার সিরাজ একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষে পটুয়াখালীতে ব্যবসা করতেন। তিনি ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজিতে যোগ দেন। হুজির কার্যক্রম স্তিমিত দেখে ২০১৪ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি জামাতুল আনসারে যোগ দেন। আর মাহফুজুর রহমান সিলেটের জগন্নাথপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৮ সালে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।