চিঠি লেখার দিন আজ

ফাইল ছবি

চিঠি লেখার দিন আজ

অনলাইন ডেস্ক

ভোরের আলো ফুটতেই ডাকহরকরা বেরিয়ে পড়তেন সাইকেলে বা কাঁধে বস্তা নিয়ে। বস্তার ভেতর থাকতো প্রিয়জনদের চিঠির জীবন্ত সব অনুভূতি, আবেগ, ভালোবাসা বা আর্তনাদ। মানুষ অধীর অপেক্ষায় বসে থাকতো পথ চেয়ে কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি?

ডাকপিয়নের সাইকেলের  টুংটাং পরিচিত শব্দে সে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতো। আজও ডাকবাক্স আছে, ডাকপিয়নও আছে, নেই শুধু চিঠি।

ডাকবাক্সগুলো করুন চোখে দাঁড়িয়ে আছে কালের বিবর্তনের সাক্ষী হিসেবে।

‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, গানটি লিখতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনোদিন ভেবেছিলেন মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে! শেরশাহের ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হতো তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্রের ঝক্কি ছাড়া কেউ ডাকঘরে যায় না, অথচ একসময় দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। এমনকি অন্তরের খুব কাছের কাউকে মুখে না বলতে পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে নেয়া হতো চিঠিতে।

চিঠির আদলে রচিত হয়েছে রবিঠাকুরের গল্প স্ত্রীর পত্র, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বাঁধনহারার মতো পত্রোপন্যাস।

কবি জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত চিঠিপত্রও সাহিত্যের অন্যতম লেখনী।

এক যুগ আগেও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। ছেলে চিঠি লিখতো মাকে, স্বামী স্ত্রীকে, প্রবাসী নিজের পরিবারকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে। আজ আর কেউ চিঠি লেখে না। চিঠির কলমের কালিতে মিশে থাকে না প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনা বা অব্যক্ত সব অনুভূতি। কাউকে এখন গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা পোষে পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না।

মহাদেব সাহার কবিতার মতো করে কত প্রেমিকই তো তার প্রিয়তমার কাছে চিঠি চাইতেন।

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানা চিঠি। ’

বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন যোগাযোগের অন্যতম ভরসা মোবাইল ফোন। ফেসবুক, টুইটার, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে চিঠি হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেখানে মুহূর্তেই মনের কথা জানানো যাচ্ছে, তখন কে-বা আর চিঠির ব্যবহার করবে বলুন।

পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। কল্পনার গতির থেকেও দ্রুত গতিতে টুং শব্দে চলে আসে মেসেজ, ফোনকল বা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে প্রিয়জনের মুখ। যোগাযোগ করতে বেগ পেতে হয় না। সরকারি-বেসরকারি কাজেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট, ই-মেইল, স্মার্টফোন।

১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব চিঠি লেখা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমরা শখ করে হলেও চিঠি লিখে ডাকবাক্সে পাঠাতে পারি প্রিয়জনদের ঠিকানায়। তাতে সময়ের বিবর্তনে হারানো ‘চিঠির যুগ’র স্বাদ কিছুটা হলেও আস্বাদন করা যেতে পারে।

News24bd.tv/desk