'সরকার বাংলাদেশের দেহ থেকে কিডনি-লিভার বিক্রি করে দিচ্ছে'

'সরকার বাংলাদেশের দেহ থেকে কিডনি-লিভার বিক্রি করে দিচ্ছে'

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। আমেরিকায় গণতন্ত্র সামিটে বিভিন্ন দেশকে দাওয়াত করেছে কিন্তু তারা বাংলাদেশকে দাওয়াত দেয় নাই।  

জার্মান একটি প্রতিষ্ঠান ১২৯টি দেশের মধ্যে জরিপ করে ফলাফল প্রকাশ করেছে তারমধ্যে ৫টি দেশকে তারা স্বৈরশাসন বলে উল্লেখ করেছে। জার্মান প্রতিষ্ঠানের জরিপে স্বৈরশাসনে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ।

ঐ জরিপে লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডাকেও স্বৈরশাসনের দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাশ করা হয়েছে। সরকারের সামলোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহি হিসেবে দেখাতেই সাইবার সিকিউরিটি আইন পাশ করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সরকার গণমানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে।

সরকারের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে গণতন্ত্রহীনতা। গণতন্ত্রে দেশের মালিক হচ্ছে দেশের জনগণ। বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের কোন প্রয়োজন ছিল না, প্রচলিত আইনেই বিচার ব্যবস্থা সম্ভব।  

সরকার যা খুশি করবে তার প্রতিবাদ করলেই সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা। আসলে সরকার মানুষের মুখ বন্ধ করতেই সাইবার সিকিউটি আইন করেছে। এই আইনের কারণে কোন নিউজ পেপারে নিউজ করতে পারবে না, টেলিভিশন সত্য প্রকাশ করতে পারবে না। সরকারের শিখিয়ে দেয়া সংবাদ পরিবেশন করবে গণমাধ্যমগুলো। আমাদের দেশের দেহ থেকে কিডনি ও লিভার চুরি করতে দেবো না আমরা। আমরা সবল ও সুস্থ বাংলাদেশ চাই।  

আজ বিকেলে নীলফামারীর শহীদ মিনার চত্বরে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।  

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন,  রুপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি। রুপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প অত্যন্ত বিপদজ্জনক প্রকল্প। সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলারে দুই হাজার চারশো মেগাওয়াট ওয়াটের রুপপুর পারমানবিক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত তিন হাজার মেগাওয়াটের একই ধরনের প্রকল্প প্রকল্প বাস্তায়ন করতে খরচ করেছ পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের দেশে প্রায় তিনগুণ খরচ হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্ঘটনা হলে তা হয়ে ভয়াবহ যা আমাদের পক্ষে সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। রাশিয়ার চেরোনোবিল আনবিক দুর্ঘটনার কারণে এখনো ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বসতি স্থাপন করতে দেয়া হচ্ছে না। এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা কি মোকাবেলা করতে পারব? আণবিক শক্তি নয় আণবিক বিপদ আমরা ঘাড়ে নিয়েছি। এটি একটি বিপদজ্জনক ঝুঁকি। পশ্চিমা দেশগুলো এখন আর সস্তার নামে আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না। এই সস্তা প্রকল্পও তিনগুণ দামে নির্মাণ হলে আর সস্তা বলা যায় না। বিষক্ত প্রযুক্তিকে ক্লিন বলা যায় না। এই প্রকল্পের সকল ইঞ্জিনিয়ার রাশিয়ার আর কনসাল্টেন্ট হচ্ছে ভারতের। বাংলাদেশের কোন কন্ট্রোল থাকবে না।  

আমরা আগে বলেছি, বাংলাদেশকে রক্ত শূন্য করে সরকার তার গাঁয়ে গহনা পরিয়ে দিয়েছে। এখন বলতে চাই, সরকার বাংলাদেশের দেহ থেকে কিডনি ও লিভার বের করে বিক্রি করে দিচ্ছে। ভাবষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ রেখে যাচ্ছি। আমরা সস্তা বিদ্যুতের নামে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই না।  

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, অবহেলিত উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়নের জন্য আলাদা দরদ ছিল পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। তাই, উত্তর বঙ্গের মানুষও অকৃত্রিমভাবে ভালোবেসেছেন প্রিয় নেতা এরশাদকে। উত্তরাঞ্চেলের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যমুনা বহুমূখী ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। ৭শো মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যমুনা সেতু নির্মাণ করেছিলেন। চার বছরের প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্ধারিত ব্যয়েই যমুনা সেতু প্রকল্প সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম ও সফল প্রকল্প হচ্ছে যমুনা বহুমুখী সেতু। যমুনা সেতুর কৃতিত্ব দিতে চায় না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।  

এরশাদ ছাড়া যমুনা সেতু বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। উত্তর বঙ্গের মানুষ এখনও মনে জাতীয় পার্টিই হচ্ছে তাদের আস্থা ও ভরসার রাজনৈতিক শক্তি। যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ৫ কিলোমিটার আর পদ্মাসেতু হচ্ছে সোয়া ৬ কিলোমিটার। পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করার নামে তিনগুন অর্থ ব্যায় করা হয়েছে। ৪ থেকে ৫ বছরের প্রকল্প প্রায় ৮ বছরে শেষ হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের দেড় বিলিয়ন ডলারের পদ্মাসেতু নির্মাণ করেত খরচ করা হয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নাকি নিজস্ব টাকায় তৈরি করা হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন ব্যয় সম্পূর্ণ বিদেশী ঋণ ও ব্যাংক ঋণের ধার করা টাকায় চলে। এই অনেক বেশি সুদ গ্রহণ করতে হয়। আমরা বেশি সুদের তিনগুণ টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। জাতীয় পার্টির আমলে দুর্নীতিমুক্ত ভাবে যমুনা সেতু তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু, পদ্মাসেতু নির্মাণ হয়েছে অতিরিক্ত সুদে নেয়া তিনগুন বেশি টাকা খরচে।  

এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষমতার জন্য দুটি দলের নেতারা আবোল-তাবোল বক্তৃতা করছে। দুটি দলের হাত থেকে দেশের মানুষ বাঁচতে চায়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দেবে।  

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দুটি দল ক্ষমতার মোহে মুখোমুখি অবস্থান সিয়েছে। দুটি দলের কারণে দেশের মানুষের মাঝে ভিতি ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের আস্থার স্থল। আমরাই দেশের মানুষকে মুক্তি দেবো।  

জাতীয় পার্টি নীলফামারী জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন এন কে আলম চৌধুরী এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব একেএম সাজ্জাদ পারভেজের সঞ্চালনায় - সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন - জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আক্তার এমপি, মেজর (অবঃ) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, ভাইস-চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, এস এম ইয়াসির, জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে - জয়নাল আবেদীন, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক, রশিদুল আলম, শরিফুল ইসলাম প্রিন্স, লেঃ কর্নেল (অবঃ)তসলিম উদ্দিন, হামিদুল ইসলাম,চয়ন, সায়েদুর রহমান ভুলু, মোশাররফ হোসেন মিন্টু, ও বজলার রহমান, আতাউর রহমান বাবু প্রমুখ।