রাজনীতিতে আবারও সংলাপ

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতিতে আবারও সংলাপ

এফএ শোভন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি যেখানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের শর্তে সংলাপ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সেখানে সাংবিধানিকভাবে সংলাপের কথা বলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস চিঠিগুলো পৌঁছে দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানান তিনি।  তিন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

সংলাপ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য
এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক ব্রিফিংয়ে সংলাপের বিষয়ে কথা বলেন।

বিরোধী দলের অধিকাংশ নেতা কারাগারে থাকায় কীভাবে সংলাপ হবে? এমন প্রশ্নে- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাফ জানান, বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি আরোপ নিয়ে যা বললেন ম্যাথু মিলার

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকার ঠিক করবে দেশের জনগণ। আমি অনেকবার বলেছি, আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থন করি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ দেশটির নাগরিকদের নির্ধারণ করা উচিত। বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষ নেয়নি। আমরা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না।

সংলাপে আওয়ামী লীগের শর্ত
চিঠি প্রাপ্তির কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ডোনাল্ড লু'র চিঠি পেয়েছেন বলে নিউজ২৪ টেলিভিশনকে নিশ্চিত করেছেন। তবে বিএনপির সাথে সংলাপ হবে কিনা এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি সাংবিধানিকভাবে বিএনপিকে সংলাপে আনতে পারে তাহলে সংলাপ সম্ভব, অন্যথায় নয়।

ইশতেহারে যা যা প্রাধন্য পাচ্ছে, জানালেন কৃষিমন্ত্রী

সংলাপ নিয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে সংলাপে আপত্তি নেই, তবে কার সাথে সংলাপ তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এদিকে, মঙ্গলবার ১৪ দলের এক সভায় মহাজোট নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শর্তহীন সংলাপ করতে চাইলে বিএনপিকে আগে একদফা প্রত্যাহার করতে হবে। গাড়ি পুড়িয়ে সরকার পরিবর্তন করা যায় না বলেও জানান এই নেতা।

সংলাপের বিষয়ে যা বলছে বিএনপি
সোমবার সন্ধ্যায় ডোনাল্ড লু'র চিঠি প্রাপ্তির বিষয় নিশ্চিত করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তারা পেয়েছেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারাগারে থাকায় চিঠিটি কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদের ইমেইলে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দলটি সংলাপে বসবে কিনা সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেননি কেউ।

এই তফসিল নাটক বন্ধ করুন : রিজভী

 

চিঠি পাওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে রিজভী বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। নিজেরাই ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা-ভাঙচুর, সহিংসতা করে পুরনো কায়দায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে পিটার হাস
সোমবার বিকেলে লু'র চিঠি নিয়ে জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে হাজির হন পিটার হাস। সেখানে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সাথে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন হাস। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর গণমাধ্যমে ব্রিফ করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

গণমাধ্যমকে চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলগতভাবে কোন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া হয়নি। পার্টি মনে করে দেশে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইতে পারে। তবে নির্বাচন কেমন হবে সেটা আমাদের নিজস্ব বিষয়।

এছাড়াও, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তবে এখনও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির সময় আছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কিনা তা নির্ভর করে পরিবেশের ওপর।

সংলাপ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত
সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, নির্বাচনে সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের এই সংকটকালীন সময়ে শর্তহীন ও খোলামেলা সংলাপের খুবই দরকার। এতে করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি ও অভিযোগগুলো সরাসরি উপস্থাপন করতে পারবে।

ডোনাল্ড লু'র চিঠি দেয়ার বিষয়ে সাবেক এই সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত এসব আলোচনায় সংলাপের কোনো সুর পাওয়া যাচ্ছে না। এই আলাপ আলোচনা করে সংলাপ সম্ভব নয়। সবাই যে যার জায়গায় অনড়। এর ফলে সংলাপ সম্ভব হচ্ছে না। সংলাপের জন্য প্রতিটা রাজনৈতিক দলকে নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দিতে হবে। তাইলেই সংলাপ সম্ভব।

আবু আলম শহীদ বলেন, সংলাপ হবে খোলামেলা। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন সংবিধান মেনে সংলাপ হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এখানে সংবিধান নিয়েই তো প্রশ্ন। সংলাপের জন্য প্রতিটা দলকে আন্তরিক হতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে দলগুলোর কারও প্রতি কারও আন্তরিকতা নেই। নিবন্ধিত ৪৩টি দলের মধ্যে ২৮টি দলেরই সরকারের ওপর আস্থা নেই।

নির্বাচনের আগে সংলাপের বিষয়টি বিশ্বজুড়েই চর্চিত। স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। সেখানে খোলামেলা সংলাপের আয়োজন দেখতে পারে দেশের সাধারণ ভোটাররা।

news24bd.tv/FA