হালখাতার আয়োজন করেও ধারের টাকা উত্তোলন করতে পারলেন না শিক্ষক

কুড়িগ্রামে ধার দেওয়া টাকা ফেরত পেতে শিক্ষক আব্দুল আউয়াল আয়োজন করেন হালখাতার। ছবি: নিউজ২৪

হালখাতার আয়োজন করেও ধারের টাকা উত্তোলন করতে পারলেন না শিক্ষক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে ধার দেওয়া টাকা ফেরত পেতে এক শিক্ষক আয়োজন করেন হালখাতার। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) আন্ধারীঝাড় বাজারের সিঙ্গাড়া হটস্পট নামের একটি দোকানে আয়োজন করা হয় এই হালখাতার। তবে দিন শেষে ধার দেয়া টাকার অর্ধেকও উত্তোলন করতে পারেননি ওই শিক্ষক।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এম,এ,এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল।

তিনি বন্ধুদের দেয়া ধারের টাকা সময় মতো তুলতে না পেরে হালখাতার আয়োজন করেন। এই হালখাতার আয়োজনের দিন তারিখ ঠিক করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেনাদারদের চিঠি দেন তিনি। সেই চিঠিতে দেয়া নির্ধারিত দিনে অর্থাৎ শুক্রবার বিকেলে হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হালখাতার আয়োজনে কোন প্রকার কমতি ছিলো না।

আন্ধারীঝাড় বাজারের সিঙ্গাড়া হটস্পট নামের দোকানটি সাজানো হয় রঙ্গিন কাগজ দিয়ে। পাতানো হয় চেয়ার টেবিল। ক্যাশ বাক্সের সামনে সাঁটানো হয় শুভ হালখাতার ব্যানার। ধারের টাকা পরিশোধে আসা ব্যক্তিদের আপ্যায়ণ করা হয় মাংস বিরিয়ানী দিয়ে। প্রতিজনকে দেয়া হয় প্যাকেট আকারে। কেও খেয়ে গেছেন, আবার কেও নিয়ে গেছেন। টাকা পরিশোধের পর খাতা থেকে নাম কাটা গেছে তাদের। এই হালখাতায় আমন্ত্রিত ছিলেন শিক্ষক আব্দুল আউয়ালের বন্ধু-বান্ধব, যারা তার নিকট থেকে টাকা ধার করেছিলেন। এছাড়া এ হালখাতা দেখতে উপস্থিত ছিলেন উৎসুক জনতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

হালখাতায় টাকা পরিশোধ করতে আসা সোলাইমান ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছে ৩ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছিলেন। হালখাতার চিঠি পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হলেও আজ হালখাতায় অংশ নিলাম। বিরিয়ানি খেয়ে দেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করেছি।

জব্বার মিয়া জানান, মেয়ের স্কুলে ভর্তির জন্য সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে। আজ হালখাতায় টাকা পরিশোধ করলাম। বিষয়টা ভালো লেগেছে। এতে ঋণ মুক্ত হলাম।

একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আনোয়ারুল হক জানান, আউয়াল মাষ্টারের মন অনেক বড়। তিনি বন্ধু বান্ধবদের টাকা ধার দিয়ে আনন্দ পান। সেই টাকা তোলার জন্য আজ হালখাতার আয়োজন করেছেন। বিষয়টি নেগেটিভলি না নিয়ে পজেটিভলি নেয়া দরকার। কারণ ধার নিয়ে মানুষ এখন দিতে চায়না। সেটা তোলার জন্য এই ব্যতিক্রমি আয়োজন করায় তাকে ধন্যবাদ।

শিক্ষক আউয়াল জানান, দীর্ঘদিন যাবত ধার দেয়া টাকা তোলার জন্য তিনি হালখাতার আয়োজন করেছেন। হালখাতার চিঠি পেয়েই অনেকে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পরিশোধ করেছেন। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) হালখাতার দিন অনেকে টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার অনেকে আসেনি। তিনি আরও জানান, ৩৯ জনকে চিঠি দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ১৯ জন এসেছেন। মোট দেড় লাখ টাকা উঠেছে। এখনো দুই লাখের মতো টাকা উঠাতে পারি নাই।

আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাবেদ আলী মন্ডল হালখাতার আয়োজন দেখতে এসে জানান, ধার বা হাওলাত সমাজের একটি চিরাচরিত নিয়ম। মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন এই পন্থা থাকবে। তবে হাওলাত নেয়া টাকা ফেরত না দেয়ার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আজকে হাওলাতের টাকা তুলতে হালখাতা করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি অবাক করার মতো। ডিজিটাল সময়ে ডিজিটাল বিষয়। তবে হাওলাতের টাকা সময় মতো ফেরত দেয়া উচিৎ।

news24bd.tv/DHL