কালীগঞ্জে জামাই মেলায় চলে জামাই-শ্বশুরের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে জামাই মেলা।

কালীগঞ্জে জামাই মেলায় চলে জামাই-শ্বশুরের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে প্রায় ২শ’ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। এটাকে জামাই মেলা নামেও ডাকে অনেকে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে বসেছে মাছের মেলা। এটি অগ্রহায়ণের ধানকাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হয়।

প্রায় ২শ’ বছরের পুরোনো এই মেলা প্রতি বছর হাজারও মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

মূূলত এটা মাছের মেলা হলেও সবাই এটাকে জামাই মেলা বলেও চেনে। কারণ স্থানীয় জামাই এবং শ্বশুরদের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর সারা দেশ থেকে বিক্রেতারা এখানে মাছ নিয়ে আসেন।

তাই দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসেন মাছ কিনতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিনিরাইল গ্রামের বিরাট এলাকাজুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন মাছ বিক্রেতারা। সহস্রাধিক স্টলে দেশের বিভিন্ন জায়গার মাছ বিক্রেতারা এখানে মাছ বিক্রি করছেন। তারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ ওপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে কত বেশি ওজনের বা বড় মাছ মেলায় আনতে পারেন। অন্যদিকে স্থানীয় জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও হয় সেই বড় মাছ কেনার নীরব প্রতিযোগিতা।

মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া কার্পজাতীয় নানা মাছও রয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ৩০ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সামর্থ অনুযায়ী ক্রেতারা এসব মাছ কিনছেন। তবে বড় মাছ কেনার জন্য বিনিরাইলের মাছের মেলাই সবচেয়ে উত্তম জায়গা।

মাছের মেলায় জামাই-শ্বশুরের মাছ ক্রয়ের প্রতিযোগিতা চলে। প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় জামাই মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায়।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলের মাছের মেলায় ক্রেতার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভীড় বেশি। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়ায় প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন তারা। এখানে বেচাকেনাকে মুখ্য মনে করেন না বলেও জানান বিক্রেতারা।

আয়োজক কমিটি জানায়, শুরুতে মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধানকাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২শ’ বছর ধরে মেলা আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। তাই বেড়েছে মেলার পরিধিও।

এখানে শুধু মাছ নয়, এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, হস্ত, চারুকারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজষপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের সহস্রাধিক স্টল বসে। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে আনা এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক