মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা

ড. শামসুল আলম

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা

ড. শামসুল আলম

বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়েছে দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির এই জটিল রোগটা এসেছিল সেই কভিড-১৯-এর মতো বাইরে থেকে। ২০২২-এর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পণ্য চলাচল শৃঙ্খল যখন ভেঙে পড়ে, তখনই মূল্যস্ফীতির তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যুদ্ধের আগে কভিড-উত্তর দেশে দেশে অর্থনীতির পুনরুত্থান ঘটছিল, যে কারণে ভোগ্য পণ্য, উৎপাদন উপকরণ, যন্ত্রপাতি, বাণিজ্য সহায়ক সেবাগুলোর দাম বেড়ে চলছিল।

দ্রুত মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল তখন চাহিদা বৃদ্ধি জনিত কারণে। এই চাহিদা বৃদ্ধি জনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ নজিরবিহীনভাবে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ সুদের কারণে ডলারের যাত্রা উচ্চ সুদের হারের দেশসহ যুক্তরাষ্ট্রমুখী হতে থাকে। বাংলাদেশেও নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর অনিশ্চয়তা বিবেচনায় এবং উচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় ডলারের চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যায়।

দেশের অভ্যন্তরেও টাকাকে ডলারে রূপান্তরে অনেকে আগ্রহী হয়ে ওঠে মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পেতে অথবা টাকা-ডলার লেনদেনে মুনাফা নিশ্চিত করতে। ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে যায় এবং বিপরীতে টাকার মান কমতে থাকে। এক ডলারের মূল্য ৮৬ থেকে ১২৮-১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়, গড়ে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটে প্রায় ৩০ শতাংশ। ভোগ্য পণ্য ছাড়াও আমাদের শিল্পপণ্যের উপকরণ, যন্ত্রপাতি, কৃষির উৎপাদন উপকরণ, মৎস্য, পোলট্রি-গবাদি পশুর খাদ্য, ওষুধ, সার, জ্বালানি—সব কিছুর দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। ফলে সহসাই আমদানীকৃত মূল্যস্ফীতি উৎপাদন খরচ তাড়িত মূল্যস্ফীতিতে রূপান্তর ঘটে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনাকভিডকালীন অর্থনীতির চাপকে সরকার অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে। ব্যবসার সর্বপর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা, সামাজিক কর্মসূচি জোরদারকরণ, প্রত্যাগত প্রবাসীদের ব্যবসা শুরুর মূলধন জোগান দেওয়া, সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনা মূল্যে কভিড প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা—সবই ছিল সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ। বিপত্তিটা শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে। বাংলাদেশের অপ্রতিহত মূল্যস্ফীতিতে বড় ভূমিকা ছিল ‘বিশ্ব মূল্যস্ফীতির’ বাংলাদেশে আপতন।


সেটা আরো উসকে দিয়েছে টাকার মানের আকস্মিক ধস। ফেডের কয়েক দফা সুদের হার বাড়ানো ছাড়াও দেশে ডলারের আকস্মিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনেও অনেক অর্থনীতিবিদ/রাজনৈতিক বিশ্লেষক দায়ী করেছেন দেশ থেকে টাকা পাচারকে। বলা হয়, সেটা হয়েছে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং বিদেশে ডলার সরিয়ে নেওয়া বা রেখে দেওয়ার কারণে। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়, হুন্ডি ব্যবসাও টাকা পাচারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমে আমদানি নিয়ন্ত্রণ (রিজার্ভের পতন ঠেকানো ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য)। ভাবা হয়েছে, টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানো গেলে মূল্যস্ফীতি কমাতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পলিসি সুদের হার বাড়ানো হলো ৮ শতাংশে, যা ২০২২-এর জুনে ছিল ৫.৫ শতাংশ। কলমানি হার বাড়ানো হলো ৮.৭৭ শতাংশ, যা জুন ২০২২-এ ছিল ৪.৪২ শতাংশ, ‘৬-৯’ শতাংশ সুদহার সীমা উঠিয়ে নেওয়া হলো। সুদের হার বাড়ানোর অর্থ ঋণের খরচ বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা টাকার ব্যয় কমিয়ে আনে, মানে বাজারে মোট পণ্য চাহিদা কমিয়ে আনা। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ব্যাংকে সরকারি ঋণ কমিয়ে আনা, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নতুন মুদ্রা সৃষ্টি না করা—সবই ছিল বাজারে চাহিদার চাপ কমিয়ে পণ্যের দরদাম কমিয়ে আনা। চাহিদাতাড়িত মূল্যস্ফীতি হলে তা দ্রুত কার্যকর হতো। আগেই বলেছি, আমাদের মূল্যস্ফীতি ক. উৎপাদন খরচ তাড়িত, খ. প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি জনিত। এই দুই ক্ষেত্রেই প্রয়োজন উৎপাদন ও সর্বক্ষেত্রে বাজার কার্যক্রম জোরদার করা। পণ্য উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সর্বত্র (কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে) নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। শিল্প-কারখানায় গ্যাস/বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ দ্রুত নিরসন করতে হবে। বোরো চাষে বিদ্যুৎ, ডিজেলের ঘাটতি যেন না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষি খাত-উপখাতে খরচ কমিয়ে আনার উপায় হলো প্রতি শ্রমিকে উৎপাদিকা বাড়ানো, প্রতি ইউনিট জমিতে আরো অধিক উৎপাদন। শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে চাই যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গোড়াতে মানসম্মত শিক্ষা। অধিক উৎপাদন খরচ কমে আসবে। যেকোনো পর্যায়ে শিক্ষাঙ্গনগুলো এখন হয়ে উঠুক শিক্ষা প্রশিক্ষণের তীর্থকেন্দ্র। দীর্ঘ স্থায়ী মূল্যস্ফীতি উৎপাদনকারীদের পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করে। কেননা প্রত্যাশা করতে পারে সে বেশি মূল্য পাবে।

উৎপাদনকাজে বেশি মূল্য সংযোজন উৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য কৃষির এক উপখাত থেকে অন্য উপখাতে (কম মূল্য সংযোজনকারী ফসল থেকে মৎস্য চাষ অথবা বনায়ন) ভূমির ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, জাতীয় মোট সম্পদ এতে বৃদ্ধি পাবে। কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন আবহাওয়ার খেয়ালিপনা থেকে বের করে প্লাস্টিক ঘরে নিয়ে এসে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে বহুতল ফসল উৎপাদনে যাওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। ভূমি সংকটের এটাই উপযুক্ত সমাধান। এর জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা দেওয়া/প্রয়োজনে ভর্তুকির নতুন বিন্যাস করতে হবে। ঝুঁকিমুক্ত প্লাস্টিক হাউস/গ্রিন হাউসের উৎপাদন নিশ্চিতে ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। পণ্য বাজারজাতকরণে বাজার অবকাঠামো (পণ্য চলাচলযোগ্য সড়ক, গুদামঘর, বিদ্যুৎ সংযোগ) সৃষ্টির অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিবেশ। এটা নিশ্চিত করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠান, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বাজার গবেষণাসহ এসবই হবে এদের মুখ্য দায়িত্ব।

প্রলম্বিত মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। মার্চ ২০২২-এর ৬.১৫ শতাংশ সাধারণ মূল্যস্ফীতি মার্চ ২০২৪ সালে উন্নীত হলো ৯.৬৭ শতাংশে। ২০২৩ সালে এসে পশ্চিমা দেশগুলোসহ ভারতে মূল্যস্ফীতি কমে কভিড-পূর্বাবস্থায় অথবা তার কাছাকাছি চলে এসেছে। ভারতে গড় মূল্যস্ফীতি এখন ৫.১ শতাংশ, দিল্লিতে সবচেয়ে কম, ২.৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশ উৎপাদন উপকরণসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আমদানিকারক দেশ। যেহেতু আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন উৎপাদন খরচ তাড়িত মূল্যস্ফীতি, তাই ভারতসহ অন্যান্য দেশের মতো চাহিদাতাড়িত মূল্যস্ফীতির প্রথাগত দাওয়াই (নীতি সুদ হার বাড়ানো, সংকুচিত মুদ্রানীতি) আমাদের দেশে খুব একটা কার্যকর হয়নি। আমাদের অর্থনীতির দুটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রাস্ফীতি ব্যামো সারানোর সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে।

আমরা সাংবিধানিকভাবেই মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আছি। বাজারকে ব্যবহার করে সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর নীতি কৌশল গ্রহণ ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের মুক্তবাজার কাঠামোতে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সাফল্যের প্রাণ হলো সর্বপর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে রাখা। মুক্তবাজারে ব্যক্তি উদ্যোক্তা মুনাফা অর্জনের প্রবণতা দ্বারা স্বপরিচালিত। এই মুনাফা অর্জনের প্রবণতাই হচ্ছে অদৃশ্য হাত, যা প্রত্যেক উদ্যোক্তা/উৎপাদককে তাড়িত করে। অর্থনীতির এই অদৃশ্য হাতগুলো সর্বোচ্চ সক্রিয় থাকুক, নীতিনির্ধারকদের তা-ই চাইতে হবে। সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য থাকে প্রতি উদ্যোক্তা/উৎপাদক/ব্যবসায়ীর। যেহেতু প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ স্বার্থপর, প্রত্যেক উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী চাইবে সুযোগ পেলে স্বাভাবিক মুনাফা কেবল নয়, ‘গলাকাটা মুনাফা’ অর্জন করতে। মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিতেও অনেকে চাইবে। ‘গলাকাটা মুনাফা’ অর্জনের জন্য কতিপয়ে মিলে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারে, যে প্রচেষ্টাকে সিন্ডিকেট বা কার্টেল বলে (কার্টেল হলে তখন তারা একক কারবারির মতো ব্যবহার করতে চাইবে; এটা মনোপলি, যেমন—ওপেক)। বাজার প্রতারণা বহু রকম হতে পারে, ভেজাল পণ্য, মানহীন পণ্য, কম ওজন, মোটা চাল চিকন করা, কাঁচা পেঁপে পাকা বানানো, ইথানল দিয়ে কাঁচা ফল পাকানো, ভেজাল ওষুধ, ভেজাল জুস, কসমেটিকস, প্রক্রিয়াজাত পণ্যে কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক, বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল লাগানো ইত্যাদি। পরিবেশজনিত দূষিত পণ্য, মানহীন পণ্য, ভেজাল পণ্যে আমাদের মুক্তবাজার সয়লাব। এসব প্রতারণা বন্ধে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর (রেফারির) কার্যকর ভূমিকা একেবারেই অপ্রতুল, যার জন্য বাজারে আমাদের পূর্ণ মোট চাহিদা প্রতিফলিত হয় না। বাজার অর্থনীতি পূর্ণোদ্যমে কার্যকর নয় বলে এর পুরো ফল লাভ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

আমাদের মূল্যস্ফীতি কেবল উৎপাদন খরচ তাড়িত নয়, পণ্য ঘাটতিও মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। সরবরাহ ঘাটতি বাজারে সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ এনে দেয়। কোনো পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে সেটার আমদানিকে উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে না যায় এবং সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ না পায়। গুদামে হানা দিয়ে নয়, বরং এ ক্ষেত্রে বাজারকে ব্যবহার করেই বাজার সমস্যা দূর করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা মৌলিক কৃষিপণ্যের জন্যও অতিশয় আমদানিনির্ভর (এর কারণ আমাদের এখানে ভূমির বহনক্ষমতার চেয়ে বেশি জনসংখ্যা প্রতি বর্গকিলোমিটারে, আমাদের এক হাজার ১৫৭ জন, ভারতে ৪৩৪ জন; আমাদের জনসংখ্যা ভারত থেকে তিন গুণের মতো, আমদানির পরিমাণ রপ্তানির তিন গুণের বেশি)। কাজেই আমদানিতে চাপাচাপি করলে আমাদের দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না।

আমাদের দেশে বাজারব্যবস্থার প্রচলিত ব্যর্থতাগুলোর স্বরূপ উল্লেখ করেছি। সেসব নিরসনেই বাজার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যস্ত থাকতে হবে। বাজারব্যবস্থার পরিবীক্ষক এবং নিয়ন্ত্রক রেফারির (সরকারের) ভুল সিদ্ধান্ত/কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের সহায়ক অথবা প্রভাবিত সিদ্ধান্ত বাজারব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে বাজার কার্যক্রম উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হতে পারে। বাজার রেফারির প্রধান কার্যক্রম হলো আমদানি থেকে উৎপাদন এবং খামার দরজা থেকে ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত বাজার চেইনের প্রতিটি স্তরে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। ঘাটতি যদি থাকবে বাজার কুশীলবদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমদানির সুযোগ থাকবে। পণ্যের মান রেফারি ঠিক করে দিতে পারে, তবে পরিমাণ নয়। আমদানিকারকের সংখ্যাও রেফারি ঠিক করে দিতে পারে না, ৩০ জন/২৫ জন ইত্যাদি। এতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতে পারে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হলে সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ হতে পারে। দেশের ঘাটতির পরিমাণ দামের ধারা দেখে বাজার কুশীলবরাই ভালো বুঝবেন রেফারি নিয়োজিত আমলাদের থেকে। নিজ দেশের চেয়ে একই মানসম্পন্ন পণ্য কম দামে পাওয়া গেলে দেশবাসী বা ভোক্তার স্বার্থে তা-ই আনতে দেওয়া উচিত। আর উৎপাদকের ওপর খরচ কমানোর চাপও এতে তৈরি হবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদকের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

কৃষিপণ্যের বাজার যেহেতু অস্থিতিশীল এবং কৃষি ফসল উৎপাদন বহুলাংশে আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল বিধায় বৃহৎ ভোক্তাগোষ্ঠী বিশেষভাবে প্রান্তিক-নিম্নবিত্তদের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে সরকারকে আমদানি পণ্যের দেশীয় নিরাপদ মজুদ গড়ে তুলতে হবে ব্যক্তি খাতের পরিপূরক হিসেবে। দামের অস্থিতিশীলতা কমাতে ব্যক্তি খাতকেও সংরক্ষণযোগ্য পণ্য মজুদকে উৎসাহিত করতে হবে। ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষিপণ্যের বিপণন কার্যক্রমে ছোট-বড় ৩৫ হাজারের ওপর হাটবাজার/প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রে যেখানে লাখ লাখ ক্রেতা-বিক্রেতা জড়িত, সেখানে কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া কখনোই কার্যকর হয় না। এটা কৃষি বাজার ব্যবস্থা না বোঝার ফল। বাজারকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দেওয়া যায়; ততটাই মঙ্গল, ততটাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির সহায়ক, প্রবৃদ্ধি সহায়ক।

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক পরিকল্পনা কমিশন সদস্য এবং সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।