তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক বিপ্লব। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, সংগীত পরিচালক, চিত্রকর, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। বলছি সত্যজিৎ রায়ের কথা। বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহানায়কের জন্মদিন আজ।
উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্য জনক ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল।
প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়। তবে পড়াশোনার পর গতানুগতিক পেশায় নিজেকে জড়াতে পারেননি সত্যজিৎ। চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন ছিল তার। সে স্বপ্ন হাজারো ডানা মেলতে শুরু করে ১৯৪৯ সালে ফ্রেন্স পরিচালক জঁ রনোয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর।
১৯৪৯ সালে ফরাসি পরিচালক জঁ রনোয়ার তার ‘দি রিভার’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন। আর ওই সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ ঘটে সত্যজিতের। সাক্ষাতে সত্যজিৎ রনোয়ারের সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন। তার সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা শুনে রনোয়ার তাকে উৎসাহ দেন। এর ৬ বছর পরই ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন তার প্রথম সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’।
প্রথম ছবিতেই রীতিমতো ছক্কা হাঁকান খ্যাতিমান এ নির্মাতা। সিনেমাটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ডকুমেন্টরি ফিল্ম’ অর্জন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সাহিত্যকর্মেও ছিল তার অগাধ দক্ষতা। বাংলা সাহিত্যের রোমাঞ্চকর কিছু গল্প লিখেছেন তিনি। কালজয়ী ফেলুদা থেকে শুরু করে প্রফেসর শঙ্কু, তাড়িনি খুড়ো তার অমর চরিত্র।
বাঙালির অস্কার বিজয়ের স্বপ্নকে বাস্তব করেন তিনিই। ১৯৯২ সালের ৩০ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে ৬৪তম অস্কারে বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। চলচ্চিত্রশিল্পী সারা জীবনের অবদানের জন্য বিশেষ অস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় পেয়েছেন ‘বিবিসির শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ (১৩তম) উপাধি। পাশাপাশি, তার সাফল্যের ঝুঁড়িতে আছে পদ্মভূষণ ও ভারতরত্নের মতো সম্মানজনক পুরস্কার।
৩৭ বছরের বর্ণিল সাফল্যে ভরা কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটে ৭১ বছরে। জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুতে গুণী এ নিমার্তা চলে গেলেও গোটা বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মননে আজীবন অক্ষুণ্ণ থাকবে সত্যজিৎ রায় নামটি।
news24bd.tv/SC