সবশেষে ফিরেই যেতে হলো প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা ভারতের কিশোরী খুসনামাকে। শুক্রবার সকালে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া সীমান্তে ৪৪৩ নম্বর মেইন পিলার এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাকে হস্তান্তর করে। ওই কিশোরী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার হারিয়ানী গ্রামের ইসরাইল হোসেনের কন্যা।
পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি’র ১৮ ব্যাটালিয়ানের তেঁতুলিয়া কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল মোতালেব ও ভারতের হাফটিয়াগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পের অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট কোম্পানী কমান্ডার কমল সিং।বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গির উপজেলার রতনদিঘী গ্রামের ইসরাইলের ছেলে আব্দুল লতিফ রকিবের (২১) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে খুসনামার। প্রায় এক যুগ আগে রাকিব বর্ডার পার হয়ে ভারতে খুসনামার বাড়িতে যায়। তারপর খুসনামার ভাইসহ সে ভারতের কেরালার এক হোটেলে কাজ করতো।
এদিকে খুসনামাকে আনতে তেতুলিয়ার পুলিশের কাছে ছুটে যায় প্রেমিক রাকিব । কিন্তু বিধিবাম। তেতুলিয়া পৌছেই জানতে পারে তার খুসনামা পুলিশের হাতে বন্দি। সীমান্ত আইনের জটিলতায় প্রেমিকাকে ফিরে ফেলোনা সে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রাকিব । রাকিব থানায় যায়। খুসনামাকে নিজের প্রেমিকা বলে দাবি করে ছেড়ে দিতে বলে।
জানা গেছে, ভারতের কেরালা প্রদেশের হাজী আলী হোটেলে খুসনামার ভাইয়ের সাথে কাজ করতেন বাংলাদেশি প্রেমিক রকিব। ৮-৯ বছর তাদের বাড়িতে থাকার সুবাধে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে সম্পর্ক। এক পর্যায়ে বিয়েও করেন। সম্প্রতি প্রেমিক রকিব দেশে ফেরার কারণে তার জন্য উতলা হয়ে রাতের অন্ধকারে তেঁতুলিয়ার সীমান্তের কাটাতার ভেদ করে ৪৪৪ মেইন সাব পিলার-২ অতিক্রম করে মহানন্দা নদী দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন সে। তিন মাস আগে ভারতে বিয়ে হওয়ার কথাও জানায় তারা। কিন্তু বিয়ের কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি তারা। দু’দেশের সীমান্ত আইন তাদের ভালোবাসার মাঝে প্রাচীর হয়ে ওঠে। ভালাবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও নিজের করতে না পারার কষ্টে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন দুজনই।
বিষয়টি মডেল থানার ওসি আবু ছায়েম মিয়া বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৪৪৩ নং মেইন পিলারে পতাকা বৈঠক বসে। পতাকা বৈঠকে ভারতীয় তরুণী খুসনামাকে হাজির করে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় পারিবারিক সকল তথ্য। সে তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকাল ১০টায় ওই মেইন পিলারে পতাকা বৈঠক বসে। মেয়ের খবরে ছুটে আসেন খুসনামার বাবা ইসরাইল ও মা জেলাফুন। মডেল থানা পুলিশ বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেন খুসনামাকে।
এ বিষয়ে বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার বক্তব্য দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলেও পুলিশ জানায়, ভারতীয় ওই কিশোরী বয়সে নাবালিকা হওয়ায় মানবিক কারণে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে মা-বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে । ঘটনাটি মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন উৎসুক জনতার অনেকেই।
ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন
news24bd.tv/আলী