সন্তানদের মধ্যে সম্পদ সমান ভাগ করাই কাল হলো মুক্তিযোদ্ধার

সন্তানদের মধ্যে সম্পদ সমান ভাগ করাই কাল হলো মুক্তিযোদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাকা আত্মসাতের লোভে লোক ভাড়া করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হত্যা করেছে ছেলে। তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম দুই মাস আগে তার ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা তোলেন। বোনদের ঠকিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করতে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করেন ছেলে এইচ এম মাসুদ।

 হত্যার পর প্রেশার মাপার মেশিন দিয়ে নিজেই বাবার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন তিনি। এরপর সাজান ডাকাতির নাটক।

রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, এ ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর ‘ভাড়াটে খুনি’ মো. রুবেল হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের (৭২) এক ছেলে ও দুই মেয়ে।  মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।  স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলে এইচ এম মাসুদ (৪২) ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মাওলাবাজারের নিজ বাড়ির দ্বিতীয়তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই বাসা থেকে আব্দুল হালিমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  ওই সময় ছেলে মাসুদ দাবি করেন, গত রাতে তাদের বাসায় ঢুকে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে এবং বৃদ্ধ বাবাকে খুন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে গেছে ডাকাত দল।

এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন নিহতের বড় মেয়ের জামাতা জাহেরুল।  চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি তারাও ছায়াতদন্ত করেন বলে জানান পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।

পিবিআই জানায়, তদন্তে বেরিয়ে আসে নিহতের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইজিবাইক চালক মো. রুবেলের (২৭)।  প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার দিনও রুবেলের উপস্থিতি ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে পায় পিবিআই।  কিন্তু ঘটনার দুদিন পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

পরে সন্দেহভাজন হিসেবে শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা এলাকার বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।  তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রুবেলের দেওয়া তথ্যের বরাতে পিবিআই জানায়, ব্যাংক থেকে তোলা বাবার ৩০ লাখ টাকা একাই আত্মসাতের লোভে মাসুদ বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রুবেলকে ভাড়া করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাত ১০টায় মাসুদের ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতে যায় রুবেল।  তার জন্য বাসার কলাপসিবল গেট ও ফ্ল্যাটের দরজা আগে থেকেই খোলা রাখে মাসুদ।  রাত ১১টার দিকে আব্দুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে মাসুদ তার বাবার হাত-পা চেপে ধরে এবং রুবেল তার গলা টিপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগী চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে রুবেল তার মুখের উপর বালিশ চাপা দেয়।  হত্যার পর মাসুদ তার কক্ষে থাকা ব্লাডপ্রেশার মাপার যন্ত্রের সাহায্যে বাবার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হন।

পিবিআই জানায়, মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বিষয়টা জানা যাবে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে। আসামি রুবেল শনিবার বিকেলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে বলেও জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক