‘মূল্যস্ফীতি প্রশমনে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিতে হবে’

সংগৃহীত ছবি

বাজেট ২০২৩-২৪

‘মূল্যস্ফীতি প্রশমনে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিতে হবে’

অনলাইন ডেস্ক

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে হবে। উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে টাকা তো নেবেই। তারা টাকা নিয়ে দেশের উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই কমে আসবে। এ জন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমানোর অন্যান্য উদ্যোগের চেয়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কম নেওয়াই হবে উৎকৃষ্ঠ উদ্যোগ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশের প্রাক্কালে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকার তিনি এসব কথা বলেছেন।  

বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ড. মনসুর বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের স্বল্পতার কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দুটোর মধ্যে তো ভারসাম্য রাখতে হবে। রাজস্ব আয় যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে আর ব্যয় যেভাবে বাড়ছে তাতে অসমতা তৈরি হচ্ছে।

ইতিমধ্যে অসমতা হয়ে গেছে। আগামী বাজেটে আরও সংকুচিত হবে। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে সরকারের যেখানে ব্যয় করার দরকার সেখানে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারছে না। কিন্তু ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকার ঘাটতি পূরণ করা সহজ বিষয় নয়। ’

রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দিন দিন অর্থনীতির আকার বাড়লেও সেই হারে রাজস্ব বাড়ছে না। ফলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত, যেটি আমরা অর্থনীতিতে হাইলাইট করি সবসময়, তা বাড়ছে না। আমাদের কর-জিডিপি দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চেয়ে কম। এমন অবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের পুরো রাজস্ব ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করতে হবে। গোটা রাজস্ব ব্যবস্থায় অনেক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কাজ করে। তাদের ম্যানেজ করা না গেলে এ ব্যবস্থা বদলানো যাবে না। ’

বিশাল অঙ্কের ব্যাংক ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে কি না এমন প্রশ্নে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকার আগামী অর্থবছরে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চায়। বর্তমানে ব্যাংকে ডিপোজিট রেট ৭ দশমিক ৫। কিন্তু ব্যাংকে ডিপোজিট রেট কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাচ্ছে না। পাশাপাশি মোট ডিপোজিটের পরিমাণও অনেক কম। এছাড়া দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করলে সাধারণ মানুষ কোথা থেকে ঋণ পাবে?’

‘কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে মূল্যস্ফীতি তো বাড়বেই। বাজারে ক্রাউডিং আউট হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে। ফলে ব্যবসায় খরচ বেড়ে যাবে। ’

ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিকভাবে ভালো নেই। সরকার অনেক টাকা ঋণ নিয়েছে ব্যাংক থেকে। মানুষ ব্যাংকে টাকাও রাখতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার কীভাবে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকে ডিপোজিটে সুদের হার অনেক কম। টাকা কোথায় যাচ্ছে? জমিতে যাচ্ছে বা অন্য কোথায় হয়তো যাচ্ছে। টাকা হয়তো ফেরত আসবে, কিন্তু টাকার ক্রিয়েশন হচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার তখন টাকা ছাপাবে। এ ছাড়া কোনো গতি নেই। এ বছরও ছাপিয়েছে এক লাখ কোটি টাকার মতো, আগামী বছরও আর বেশি ছাপাবে। ’

ড. মনসুর বলেন, ‘বর্তমান সরকারের জন্য শেষ বাজেট। সরকার নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড়। অন্যরাও অনড়। এমন অবস্থায় স্বচ্ছ কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। সরকার যদি এক অবস্থানে থাকে যে সব সমস্যা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। জনবান্ধব বুঝি না, প্রথমত যেটা করতে হবে একটা স্থিতিশীলতা আনতে হবে। কারণ এটাই বড় সমস্যা। বাজেট জনবান্ধব হোক বা না হোক এটা করতেই হবে। না হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ’

‘সরকারকে ম্যাক্রো স্ট্যাবিলিটি আনতে হবে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সুদহার বাড়াতে হবে, ডলারকে স্ট্যাবল করতে হবে। ফিজিক্যাল বাজেটকে সংযত রাখতে হবে, যেটি সরকার করছে। কিন্তু বাকিগুলো করছে না। ’

‘আমরা যদি রাজনৈতিকভাবে না চিন্তা করি তাহলে হবে না। সে ধরণের লক্ষণ এখন পর্যন্ত নেই। কাজেই বাজেট যাই হোক এই ব্যাপারে আমাদের ভাবতে হবে। বুঝতে হবে অর্থনীতি ভালো না থাকলে তো কেউ ভালো থাকব না। রাজনীতিবিদদের সেটাও ভাবতে হবে। কারণ বাজেট সাধারণ মানুষের কতটা কাজে লাগল সেটা দেখতে হবে। ’

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক