গোপালগঞ্জে জন্ম নেয়া পেটে ও বুকে জোড়া লাগা শিশু ওমর ফারুক ও  আবু বকর। তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) জটিল অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। চিকিৎসা শেষে  সুস্থ হওয়ায় তাদের রিলিজ দেয়া হয়। এই শিশু দুটির চিকিৎসায় অর্থায়ন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার (৪ অক্টোবর ২০২৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি শিশুদের বাবার মায়ের হাতে ছাড়পত্র, কিছু উপহার সামগ্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া চিকিৎসা সহায়তার অর্থের চেক তুলে দেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব ধরণের ঝুঁকি মুক্ত হয়ে দুজনই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুশংকর কুমার মন্ডল। চিকিৎসা সেবা বিষয়ে তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন শিশু সার্জারি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানাকার শিশু সার্জারি বিভাগে শুধু ওমর ফারুক ও আবু বকরের জটিল অপারেশন হয়নি, এর আগেও বহু জটিল ও কঠিন অপারেশন করা হয়েছে। আমরা দেশে প্রথমবারের মত স্বল্প খরচে সফল লিভার প্রতিস্থাপন করেছি। আমাদের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করছি। এখানেই দেশে প্রথমবারের মতো সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতেও সক্ষম হয়েছি।  তিনি বলেন, এরকম জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবার কোন প্রয়োজন নেই। স্বল্প খরচে দেশের প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাতেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব।  

সংবাদ সম্মেলেন বলা হয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এবং অর্থায়নে টুঙ্গিপাড়ার পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো চিকিৎসাধীন ৭৮ দিন বয়সী আবু বকর ও ওমর ফারুক নামের দুজন শিশুর দেহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকগণ কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে সফলভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়।  

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, ভ্যানচালক, পিতা শহর আলী খানের মেয়ে চায়না বেগম এবং তার স্বামী আল আমিন শেখের ঘরে চলতি বছর ৪ জুলাই বুকে পেটে জোড়া লাগানো এই দুই নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। এরপর গত ৫ জুলাই তাদেরকে শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম জাহিদ হোসেনের অধীনে ভর্তি করা হয়। বুকে পেটে জোড়া লাগানো যমজ এ দুই নবজাতকের চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

এরপর শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ওই বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেএম দিদারুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুশংকর কুমার মন্ডল, সহকারী অধ্যাপক ডা. কে. এম. সাইফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. নুর মোহাম্মদ, মেডিক্যাল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন ছাড়াও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও ডা. মাহফুজ আলম খান রাতুল, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. গোলাম মোস্তফা, ডা. তানজিরুল ইসলাম এবং ডা. নয়ন চন্দ্র সরকারসহ অন্যান্য রেসিডেন্টগণ এবং নার্সিং অনুষদের ডিন ও এ্যানাসথেসিওলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, এ্যানাসথেসিওলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিক এবং ওটি ইনচার্জসহ অপারেশন থিয়েটারের সকল নার্সিং স্টাফ ও অন্যান্য স্টাফগণ এ জটিল অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।