যে কারণে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের হার 

সংগৃহীত ছবি

যে কারণে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের হার 

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। ভালো মানের উইকেটেই কিউইদের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় টাইগাররা। সিলেট টেস্টে এমন দাপুটে জয়ে ঢাকা টেস্টে জয় ব্যতীত কিছুই ভাবছিল না স্বাগতিকেরা। কেননা মিরপুরের ‘লো অ্যান্ড ট্রিকি’ উইকেটে যে মিরাজ-তাইজুলরা অদম্য তা তো সবারই জানা।

কিন্তু না, যেন নিজেদের খোঁড়া গর্তে নিজেরাই পড়লো বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে আজ শনিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড তুলে নিয়েছে ৪ উইকেটের জয়। স্পিন দিয়ে কিউইদের ঘায়েল করার পরিবর্তে উল্টো টাইগাররা নিজেরাই যেন ঘায়েল হয়েছে স্পিনে।

এছাড়া আরও যেসব কারণে মিরপুরে এই হার বাংলাদেশ দলের, থাকছে এ প্রতিবেদনে 

নিজেদের পাতা ফাঁদে আটকা 

বলতে গেলে নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই পড়েছে বাংলাদেশ।

সেনা (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) সদস্যভুক্ত দেশগুলো স্পিনে তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সে কারণেই এই অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর বিপক্ষে 'র‍্যাংক টার্নার' উইকেট বানায় বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলার উইকেট এবারও তাই স্পিন স্বর্গ বানায় পিচ কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা।

তবে হোম গ্রাউন্ডের ফায়দা লুটেও টেস্ট জেতা হয়নি বাংলাদেশের। উল্টো কিউই স্পিনাররা করেছেন বাজিমাত। দুই ইনিংসে যেখানে নিউজিল্যান্ডের ১৩ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশি স্পিনাররা, সেখানে দুই ইনিংস মিলিয়ে কিউই স্পিনাররা নিয়েছেন ১৭ উইকেট। অর্থাৎ, তাইজুল-মিরাজ উইকেটের সুবিধা নিয়ে যতটা না ভালো করেছেন, সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে তার চেয়ে ভালো করেছেন এজাজ প্যাটেল এবং মিচেল স্যান্টনাররা।

ব্যাটারদের নিদারুণ ব্যর্থতা

ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসেই চরমভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে স্বাগতিক ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি অভিজ্ঞ কোনো ব্যাটারই। দুই ইনিংসেই ব্যর্থ আগের টেস্টে সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত। সিলেটে প্রথম ইনিংসে বড় ইনিংস খেলা মাহমুদুল হাসান জয় মিরপুরে দুই ইনিংসে করেছেন মোটে ১৬ রান। মুমিনুল হকও পারেননি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে। মুশফিকুর রহিম প্রথম ইনিংসে ৩৫ রান করে শিশুসুলভ ভুলে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯ রান করে ফেরেন সাজঘরে।

তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। দুই ইনিংসে তিনি করেছেন মোটে ৭ রান। এর ফলে আবারও তিনি দল থেকে বাদ পড়েন কিনা, সেটাই এখন দেখার।

বিরূপ আবহাওয়া

মিরপুর টেস্ট শেষ হতো পারতো দুই দিন, এমনকি আড়াই দিনেও। তবে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে দ্বিতীয় দিনে খেলাই হয়নি। একটি বলও গড়ায়নি মাঠে। তৃতীয় দিনে হয়েছে মাত্র ৩২.৩ ওভার। এই বিরতিই ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকতে পারে ক্রিকেটারদের মনঃসংযোগে।

প্রথমদিনে ১৭২ রানে অলআউট হলেও ৪৬ রানেই নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় দিনে ফের খেলা মাঠে গড়ালে কিউইরা দ্রুত তুলে নেয় রান। নিয়ে ফেলে লিডও। অথচ তাইজুল-মিরাজরা যেভাবে হাত ঘোরাচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যাবে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। তা না হয়ে উল্টো লিড নেওয়ায় প্রথম ইনিংসেই পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ।

ক্যাচ মিস, ডিআরএস ব্যর্থতা

দ্বিতীয় ইনিংসে খালি হাতেই ফিরতে পারতেন নিউজিল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া গ্লেন ফিলিপস। তবে প্রথম স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। সে সময় জয়ের জন্য তখনও কিউইদের দরকার ছিল ৮৩ রান, হাতে উইকেট ছিল মাত্র পাঁচটি। সেই দফায় জীবন পেয়ে ৪০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দিয়েই মাঠ ছাড়েন ফিলিপস।

এই ক্যাচ মিস ছাড়াও পুরো টেস্টে একাধিকবার ভুলবাল রিভিউ নিয়েছে বাংলাদেশ। যার বেশিরভাগ নেওয়ার কোনো মানেই ছিল না।

news24bd.tv/DHL