নড়াইলে ডিজিটাল ফাঁদে অতিথি পাখি

নড়াইলের বিভিন্ন বিলে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার চলছে। ছবি: খায়রুল আরেফিন রানা।

নড়াইলে ডিজিটাল ফাঁদে অতিথি পাখি

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের বিভিন্ন বিলে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার চলছে। শীত মৌসুমজুড়ে পাখি শিকারিদের ব্যাপক অপতৎপরতার ফলে খাল-বিল, নদী-নালা বিধৌত সবুজশ্যামল এ জেলার অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতের অত্যতম অনুসঙ্গ পরিযায়ী পাখির বিভিন্ন অভয়াশ্রম হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে পাখি সমাগম।

এলাকাবাসী জানায়, শীত মৌসুমে নড়াইলের বড়ো বড়ো বিল জলাশয়ের অভায়াশ্রম ঘিরে বরাবর অতিথি পাখির সমাগম ঘটে।

সেই সঙ্গে শুরু হয় পাখি শিকারিদের অপতৎপরতা। এসব বিলে বিভিন্ন সময় নানা পদ্ধতিতে পাখি শিকারের অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে শিকারিদের কাছে পাখির ডাক বাজিয়ে ডিজিটাল ফাঁদে পাখি শিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সরেজমিন ইছামতি বিলে গিয়ে দেখো দেখা গেছে, ডিজিটাল পাখি শিকার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিলের দূর্গম এলাকা জুড়ে সারিসারি খুঁটি গেড়ে তাতে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চক্রাকারে নায়লনের মজবুত রশির ফাঁদ তৈরি করে দেয়া হয়।

মৌসুম জুড়ে পেতে রাখা স্থায়ী সেই ফাঁদে পাখিদের আকৃষ্ট করতে শিকারিরা ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন পাখির ঢাক ডাউনলোড করে ফাঁদের মাঝ বরাবর স্থাপত করা মাচানে সাউন্ডবক্স বসিয়ে পাখির অনাগোনা বুঝে সেই গোত্রীয় পাখির ঢাক চালিয়ে দেয়। সহজাত প্রবৃত্তির বসে স্বগোত্রীয় পাখিরা সেই ঢাক অনুসরন করে ছুটে গিয়ে আটকে পড়ে মরন ফাঁদে।

শত শত মাইল পথ পাঁড়ি দিয়ে নড়াইলের বিলমাঠে খাদ্যের সন্ধানে এসে নির্মম পরিনতি বরণ করতে হয়। পরিযায়ী এসব পাখীর উন্মুক্ত প্রান্তরে অবাধ বিচরনের মধ্যদিয়ে প্রকৃতিতে শোভা বর্ধনের কথা থাকলেও অভিযোগে জানা গেছে, ফাঁদে ধরা পড়া এসব পাখি ভোজন রসিকদের রসনার খোরাক জোগাতে বস্তাবন্দি করে কেজি দরে হাজার টাকা দরে বিকি-কিনি চলছে।

শীত মৌসুমের ৩/৪ মাস নড়াইলের বিল ইছামতি, পিরোলী বিল, চাপুলিয়া বিল, বাবুপুর বিলসহ বড়ো বড়ো বিলে নানা পদ্ধতিতে কয়েক প্রজাতির হাঁসপাখি, সরাল, কালিম, কালকুচ, সারসসহ বিভিন্ন জাতের পরিযায়ী ও দেশি পাখি শিকার করা হয়। এভাবে নির্বিচারে পাখি নিধনের ফলে জেলায় ব্যাপকভাবে কমে গেছে পরিযায়ী পাখির সমাগম। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পরিযায়ী পাখি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, নানা বর্ণ ও গোত্রের দেশি বিদেশি পাখি ছায়াসুনিবিড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত নড়াইল জেলার প্রকৃতিকে বাড়তি সুষমা দান করেছে, ব্যাপক সম্ভাবনাময় করে তুলেছে এ জেলার পর্যটন খাতকে।

তিনি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ পাখির স্বাধীন চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ পাখির নিরাপত্তা বিধানে পাখি শিকারিদের যে কোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কঠোর অবস্থানের কথা জানান।

news24bd.tv/DHL