পৃথিবীর গভীরে যা আছে

পৃথিবীর কেন্দ্রে বিরাজ করছে গলিত লাভা আর উত্তপ্ত এক পরিবেশ।

পৃথিবীর গভীরে যা আছে

অনলাইন ডেস্ক

কী আছে পৃথিবীর কেন্দ্রে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা অনেকে জানিও। আবার কারও কাছে অজানা।

পৃথিবীর কেন্দ্রে বিরাজ করছে গলিত লাভা আর উত্তপ্ত এক পরিবেশ।

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভাগ চারটি স্তর নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে তিনটি কঠিন এবং একটি তরল। কিন্তু সেটি ম্যাগমা নয় বরং গলিত ধাতু। যা কি না প্রায় সূর্যের পৃষ্ঠের মতোই গরম।

পৃথিবীর গভীরতম স্তরটিতে আছে একটি কঠিন লোহার বল। যার ব্যাস প্রায় ১ হাজার ৫০০ মাইল বা ২ হাজার ৪০০ কিরোমিটার। যদিও এই অভ্যন্তরীণ ভাগ অনেক গরম, তবে সেখানের চাপ এত বেশি যে লোহাও গলতে পারে না।

তবে সেটিকে খাঁটি লোহা বলা যাবে না। কেননা বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, এ পৃথিবীর গভীরে থাকা সেই লোহার বলটিতে রয়েছে সালফার এবং নিকেল। এছাড়া এতে অন্যান্য বেশ কিছু উপাদানও অল্প পরিমাণে রয়েছে। সেখানের তাপমাত্রা সম্ভবত ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৫ হাজার এবং ৭ হাজার ডিগ্রি সেলিসিয়াস) মধ্যে রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

এই গভীরতম অংশের উপরের স্তরে রয়েছে তরল লোহার একটি শেল। এই স্তরটি তুলনামূলক শীতল। তবে ওতটাও না। এখানের তাপমাত্রা সম্ভবত ৭ হাজার ২০০ থেকে ৯ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এই অংশেরও বেশিরভাগ লোহা এবং এখানেও যথেষ্ট পরিমাণে সালফার ও নিকেলের উপস্থিতি রয়েছে।  এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে এবং এই স্তর প্রায় ১ হাজার ৪০০ মাইল (২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার) পুরু।

এর পরের স্তরটি হচ্ছে ম্যান্টেল। অনেকে এই স্তরকে লাভা বলে মনে করলেও এটি আসলে শিলা। তবে পাথরটি এতই গরম যে এটি রাস্তার আলকাতরার মতো চাপের মধ্যে প্রবাহিত হয়। এটি খুব ধীর গতির স্রোত তৈরি করে কারণ গরম শিলা গভীর থেকে উপরে উঠে আসে এবং শীতল শিলা নিচে নেমে যায়।

ম্যান্টেল অংশটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ মাইল (২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার) পুরু। এই স্তরটি আবার দুই স্তরে বিভক্ত বলে মনে করা হয়। একটি ‘আপার ম্যান্টেল’, অপরটি ‘লোয়ার ম্যান্টেল’। পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে এই দুই স্তরের মধ্যে ব্যবধান প্রায় ৪৬৫ মাইল (৭৫০ কিলোমিটার)।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পুড়ে ছাই হলো ইউরোপীয় স্যাটেলাইট

সবশেষ ভূত্বক হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের স্তর। এখানেই আমরা বাস করি। এখানে রয়েছে পাথর, মাটি এবং সমুদ্রতল। এটি মহাসাগরের তলদেশে প্রায় ৫ মাইল (৮ কিলোমিটার) পুরু থেকে শুরু করে মহাদেশগুরোর নিচে গড়ে ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) পুরু।

ম্যান্টেলের মধ্যে প্রবাহিত ওই স্রোত ভূত্বককে ব্লকে ভেঙ্গে দেয়, যাকে বলা হয় প্লেট। যা ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করে। এটির সংঘর্ষের মাধ্যমেই তৈরি হয় পাহাড় বা এটি ভেঙ্গেই তৈরি হয় নতুন সমুদ্রতল।

মহাদেশগুলো অপেক্ষাকৃত হালকা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। যা ম্যান্টেলের উপরে ভাসমান। যেমন বিশাল ও ধীর গতিতে চলমান আইসবার্গ। আর সামুদ্রিক তলটি বেসাল্ট নামক ঘন শিলা দিয়ে তৈরি। যা ম্যান্টেলের আরও গভীরে চাপ দেয়। ফলে জল দিয়ে পূর্ণ হয়ে এমন বেসিন তৈরি হয়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ অধ্যয়ন করার জন্য ভূত্বক ছাড়া অন্যান্য স্তরে ড্রিল করে নমুনা নেয়া সম্ভব নয়। পরিবর্তে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প থেকে এর তরঙ্গগুলো কীভাবে বাঁকায়, প্রতিফলিত হয়, এর গতি কীভাবে বৃদ্ধি বা বিভিন্ন স্তরে বিলম্বিত হয়, তা দেখে অভ্যন্তরীণ মানচিত্র তৈরি করেন।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক