৪৬ বছর পর মা-বাবার সন্ধান চায় ইকবাল শামস  

সংবাদ সম্মেলন

৪৬ বছর পর মা-বাবার সন্ধান চায় ইকবাল শামস  

অনলাইন ডেস্ক

পালক বাবা-মা ও তার পরিবার কর্তৃক ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহার এবং ইকবাল শামসের প্রকৃত মা-বাবার সন্ধানের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। রাজধানীর মিরপুরের ইকবাল শামসের পরিবার শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে সেগুনবাগে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়।  

পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছেন মামলাকারীরা। এ সময় ইকবাল শামসের প্রকৃত বাবা মায়ের সন্ধান দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

 
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিরপুরের বাসিন্দা নিঃসন্তান দম্পত্তি এ কে এম শামসুল হক ও মাহমুদা হক ১৯৭৮ সালে ৭ দিনের এক শিশু সন্তানকে পালক নেন। আইন অমান্য করে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ওই শিশু সন্তানকে পালক নেন। শিশুটির পরিবারের কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। শিশুটির নাম রাখেন ইকবাল শামস।
সন্তানটিকে নিয়ে ভালোই যাচ্ছিল তাদের সংসার। মিরপুর সেকশন-১০, ব্লক-সি, লেন-১২, বাসা-০১ এই ঠিকানায় নিজেদের বাড়িতে থাকতেন তারা।

ইকবাল শামসকে মিরপুরের প্রিপেটরি গ্রামার স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি করানো হয়। পরে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। এখান থেকে ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে ইকবাল। ১৯৯৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরে ভারতের বেঙ্গালুর থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। পরে ঢাকা এসে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। স্কুল, কলেজ, ও বিশ্ববিদ্যালয়- এর সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে, তার পালক বাবা-মা’র নাম। জাতীয় পরিচয় পত্রেও একই তথ্য রয়েছে।

পরিবারের ইচ্ছায় ২০০৩ সালে শিরীন জেফরিন বেবিকে বিয়ে করেন ইকবাল শামস। নতুন বউকে নিয়ে পালক বাবা’র বাসায় থাকতেন তিনি। সুন্দর সুখী পরিবার ছিল তাদের। তিন বছর পর ২০০৬ সালে ইকবাল শামসের মা মাহমুদা হক মারা যান।

পরের বছরই ইকবালের পালক বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন রোজিনা বানুকে। রোজিনা বানু তাদের সংসারে আসার পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক গণ্ডগোল। পারিবারিক দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে ইকবাল শাসসের নামে দলিল করে দেওয়া সম্পদগুলো পুনারায় ফেরত চান তার পালক বাবা। এই অবস্থার মধ্যেই ২০১৮ সাল পর্যন্ত মিরপুরের বাসায় একই সাথে থাকতেন তারা।

পরে পালক বাবা’র অনুরোধে ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় উঠে যান তিনি। ওই বাড়ির প্রথম তলা, তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলা পালক বাবা ইকবাল শামসকে লিখে দেন আরও অনেক আগেই। এই দলিলপত্র সব কিছুই আছে। ৫ তলা ওই ভবনের তিনটি ফ্লোরের মালিক বর্তমানে ইকবাল শামস। ভবনটি গড়ে উঠেছে মোট ১.৭৫ কাঠা জমির ওপর। এর মধ্যে ১.০৫ কাঠা জমির মালিকও ইকবাল শামস।

এই সম্পত্তি নিয়ে দেখা দেয় গণ্ডগোল। এরই মধ্যে কয়েক দফা ইকবালের পালক বাবা’র দ্বিতীয় স্ত্রী’র সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তিনি পরে ইকবালে’র স্ত্রীর নামে মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ জানায়। যা গড়ায় আদালতে। পুলিশ রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার পর মামলাটি নিষ্পত্তি হয়।

এর পর ইকবালের পালক বাবা সিএমএম আদালতে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেন। মিরপুরের বাড়ির তিনটি ফ্লোর ফেরত পাওয়ার জন্যই এই মামলা করেন তিনি। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। যেখানে বাড়িটির তিনটি ফ্লোরই পালক বাবা এ কে এম শামসুল হক নিজেই রেজিস্ট্রেশন করে দেন।

পালক বাবা তৎকালীন মিরপুরের কাউন্সিলর কাজী ইমাম এর কাছ থেকে ওয়ারীশনামা উঠান। যেখানে ইকবাল শামসে তাদের সন্তান দাবি করা হয়। এই ওয়ারীশনামা দেখিয়ে পালক মা মাহমুদা হকের মিরপুরের রূপনগরের ২ কাঠা জমি’র মালিক হয়ে যান ইকবাল শামস ও তার পালক বাবা। পালক বাবা ওই জমিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে কাস্টমারের সাথে বায়না ও লেনদেন হয়। তেজগাঁওয়ের রেজিস্ট্রি অফিসে ইকবালকে ফোন দিয়ে নিয়ে যায় তার পালক বাবা এবং তার অনুরোধে দলিলে স্বাক্ষর করে দেন ইকবাল। জমি বিক্রি’র সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে যান ইকবালের পালক বাবা। পারিবারিক দণ্ড কমানো জন্যই তিনি বাবা’র কথায় রাজি হয়ে জমিটি দিয়ে দেন।

পরে সমস্যা তৈরি করে ইকবালের পালক মা’র বোন মাসুদা আকন্ড। তার বোন নিঃসন্তান দাবি করে ওই জমির মালিকানা চান। এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা করেন তিনি। জাতিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় আসামি করা হয় ইকবাল শামস ও তার পালক বাবা এ কে এম শামসুল হককে। এ মামলার তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। সিআইডি রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবা’র কথা অনুযায়ী জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইকবাল শামসকে দিয়ে দেয় এবং জমির টাকা পয়সা লেনদেন করেন এ কে এম শামসুল হক।

এই মামলার হাজিরা দিতে গত মাসের ৭ তারিখে আদালতে যান ইকবাল শামস। সেদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ১ মাসের বেশি সময় ধরে ইকবাল এখন কারাগারে রয়েছে।

পরিবার আরও বলে, পালক বাবা ও খালার মিথ্যা এ মামলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছি আমরা। আমার সন্তান তার বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না। জমির টাকা না নিয়েও মামলার আসামি। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই । ইকবাল শামসের প্রকৃত বাবা-মা’র কোনো তথ্য দেয়নি ওই পালক পরিবার। ৭ দিনের শিশু সন্তানকে চুরি করে নিয়ে আসছে ওই নিঃসন্তান দম্পত্তি। ইকবালের প্রকৃত বাবা-মা’র সন্ধান দিতে হবে। এর সুষ্ঠু সমাধান চাই আমরা।

news24bd.tv/আইএএম  

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর