জীবিত শিশু রেখে মৃত শিশু ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল!

জীবিত শিশু রেখে মৃত শিশু ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু কন্যাকে নানা নাটকীয়তার পর তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

থানা পুলিশ, চুরি হওয়া শিশুর অভিভাবক ও চাইল কেয়ার কর্তৃপক্ষের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর আজ চুরি হওয়া ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে তাদের কাছ থেকে আগের দিন বুঝিয়ে দেয়া মৃত পুত্র শিশুর লাশ ফিরিয়ে নেয়া হয়।  

এদিকে, কন্যা শিশুকে জীবিত ফিরে পেয়েই চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে গেছেন শিশুর মা ও অন্য স্বজনরা।

শিশুকে নতুনভাবে ভর্তি করিয়েছেন নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থিত রয়েল হাসপাতালে।

শিশুর মা রোকসানা আক্তার জানান, হারিয়ে যাওয়া বুকের ধন ফিরে পেয়েছি, এটা আল্লাহর রহমত। আমি যে কী খুশি হয়েছি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে আমার কন্যাকে যেভাবে বুক থেকে কেড়ে নিয়েছিল, আর যাতে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, এজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এ জন্য তিনি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

রোকসানা জানান, নিজের কন্যা শিশুর চিকিৎসা শেষে শিশু চুরির ঘটনায় চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন তিনি। এজন্য তিনি ইতোমধ্যে মানবাধিকার কমিশন ও আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন।

রোকসানার অভিযোগ, শিশু চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার দিকে সিএমপি পাঁচলাইশ থানায় গেছেন আইনগত সাহায্য পাওয়ার জন্য। চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষের দেয়া অন্যের পুত্র শিশুর লাশ ও শিশু চুরির লিখিত অভিযোগ জমা দেয়া হয় থানায়। তবে ওই সময় থানার ডিউটি অফিসার বলেন, মামলা নয় জিডি হবে। তবে সেই জিডিও নিচ্ছি-নিবো বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন ডিউটি অফিসার।

এভাবে এক ঘণ্টা-দু ঘণ্টা করে কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে রোকসানার দেবরকে একটি কক্ষে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন থানার ডিউটি অফিসার। ওই সময় মাতালের মতো অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন তাকে। বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি-ধামকির এক পর্যায়ে ক্রসফায়ারেরও ভয় দেখান ডিউটি অফিসার।   

রোকসানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, চুরি হওয়া কন্যাকে ফিরে পাওয়ার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। তবে কোনো অপরাধ করে তো যাইনি। থানায় মাত্র দুজনকে রেখে সঙ্গে থাকা অন্যদেরকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়। রাতে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি সবই গেছে পিঠের উপর দিয়ে। এরপর থেকে সবার রাত কাটে থানার সামনে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে।

মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা কর্তব্যরত অফিসার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক নোমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছে, আমি সাথে সাথে ওদেরকে নিয়ে থানার ওসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়েছি। কাউকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। কেউ যদি এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে, তা ডাহা মিথ্যা। এছাড়া থানায় তো সিসি ক্যামেরা আছে, সব কিছুরই চিত্র ধারণ হয়। কোনো স্পর্শকাতর বিষয় ওসি স্যার সরাসরি ডিল করেন। তাই স্যারের কাছে নিয়ে গেলাম। আর জিডি বা মামলা ওসি স্যারের অনুমতি ছাড়া হয় না। স্যারই এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

তবে সিএমপি পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চাইল্ড কেয়ারে একটি নবজাতককে নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। নোয়াখালীর একটি পরিবার অভিযোগ করেছিল তাদের নবজাতককে বদলিয়ে অন্য আরেকটি মৃত নবজাতক তাদের দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সারা রাত তদন্ত করি। পরে আজ সকালে (বুধবার) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নবজাতককে ফিরিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। ’

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) বিয়ের ৫ বছর পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই কন্যা সন্তান জন্ম দেন প্রবাসী মহিউদ্দিনের স্ত্রী রোকসানা আক্তার। জন্মের ১ ঘণ্টা পর অসুস্থ হলে নবজাতককে দ্রুত নোয়াখালীর মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।

গত ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন ট্রিটমেন্ট হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর পর চাইল্ড কেয়ারের কয়েকজন চিকিৎসক শিশু কন্যাটিকে আইসিইউ’তে রাখার পরামর্শ দেন। ২ দিন আইসিইউ’তে চিকিৎসার পর ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় কন্যা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ।

ওই সময় বাচ্চাটি মৃত ঘোষণার পর অভিভাবকদের ডেকে চাইল্ড কেয়ারের ব্যবস্থাপক শওকত হোসেন পরামর্শ দেন বাচ্চাটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তাই তার বীভৎস্য চেহারা না দেখাই ভাল। বাড়িতে নিয়ে দ্রুত ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে দাফন করে ফেলুন। এরপর তড়িঘড়ি করে বাচ্চাকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে রিলিজ করে দেন (ছাড়পত্র দিয়ে দেন) চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর