অজ্ঞান ও মলম পার্টির অত্যাচারে অতিষ্ঠ তেঁতুলিয়াবাসী

অজ্ঞান ও মলম পার্টির অত্যাচারে অতিষ্ঠ তেঁতুলিয়াবাসী

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় মলম পার্টির খপ্পরে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারন পরিবার। চুরি সহ বিভিন্ন প্রতারণার শিকার এসব পরিবার গুলো পাচ্ছে না তেমন আইনগত সহায়তা। এলাকার মাদকাসক্ত প্রতারক চক্রই এসব অপকর্মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তারা। গত তিন মাসে উপজেলার ভজনপুর এলাকায় চারটি বাড়িতে রাতের আধারে পরিবারের সব সদস্যদের ঘুমের ওষুধ ও বিভিন্ন চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে কয়েক লাখ টাকাসহ গহনাপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এই এলাকায় এখন মানুষ রাতের বেলা ঘুমাতে পারেন না। গ্রাম জুড়ে রাতের বেলা স্থানীয়রা দলবেঁধে পাহারা দিচ্ছেন।  

জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর, দেবনগড়, বাংলাবান্ধা, শালবাহান এবং সদর ইউনিয়নে গত একবছরে অন্তত: ৮০ থেকে ১’শ বাড়িতে এভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, মলম পার্টির সদস্যরা প্রথমে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্ধারিত বাড়িতে যায়।

তারপর কৌশলে বাড়ির খাবার পানি বা রান্নাঘরে সাজানো অন্যান্য খাবারে ঘুমের ট্যাবলেট এবং চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এমনকি টিউবওয়েলেও চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। ওই খাবার বা পানি খেয়ে পরিবারের সদস্যরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকেরা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাতে থাকে। অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সুযোগে মলম পার্টির সদস্যরা বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ টাকা, গহনা পত্র এবং জমির কাগজ পত্র চুরি করে নিয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, পারিবারিক শত্রুতার জের ধরেও অনেকে মলম পার্টিকে হায়ার করে এনে চুরি করায়। পরে জমির কাগজ জিম্মি করে অনেকের কাছ থেকে কৌশলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একসময় করতোয়া নদী সহ  সমতল ভূমিতে প্রচুর পাথর উত্তোলন হতো। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়িরা অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করলে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ফলে স্থানীয় অধিকাংশ যুবক বেকার হয়ে পড়ে। তারাই এখন মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন অসমাজিক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে৷ তারা শুধু মাদক সেবনই নয়,ভারত থেকে মাদক পাচার করে সারাদেশে বিক্রী করছে। অবৈধ পথে গরু পারাপার, রাতের আধারে বিভিন্ন সড়কে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় এবং বিভিন্ন বসতবাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চেতনানাশক খাইয়ে নানা কৌশলে চুরি করে। তাদের কোন পেশা বা আয়ের পথ না থাকলেও চক্রটির সদস্যরা এখন লাখপতি। অনেকেই পাকা বাড়ি, ফ্লাট, দামী গাড়ি মালিক বনে গেছেন; তাদের চলাফেরাও রাজকীয়।  

ভুক্তভোগীরা সন্দেহ করছে ভজনপুর এলাকার সাহিরুল ইসলাম, তারেক ও হানিফ বাবু, জাকের ও নজমুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন এসব কাজে জড়িত। কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। তবে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।  

এবিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত হানিফ বাবুর সাথে। তিনি বলেন, এলাকার কোন মানুষের বাড়িতে চুরি হলেই পুলিশ আমাকে ধরে মামলা দেয়। তাই আমি এই বিষয়ে মুক্তি চাই। তাকে কেন সন্দেহ করা হয়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আগে মাইক্রোবাস চালাতাম, অনেকেই আমার গাড়ী ভাড়া করে নিয়ে যেতো। তাই তাদের সাথে আমার যোগাযোগ থাকায় আমি বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি জানতাম। এখন তাদের সাথে যোগাযোগ নেই।

গোলাব্দিগজ গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়িতে মলম পার্টি প্রবেশ করে রাতে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে আমাদের আলমারির তালা ভেঙে টাকা-,পসয়া সোনা-গহনা ও জমির দলিলপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। আমরা এঘটনায় তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তদন্ত করে এসে চলে গেছে। আর কোন খবর নেই।  

ভজনপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সেকেন্দার আলী বলেন, আমি সাধারন মানুষের নিরপত্তার জন্য কাজ করি। অথচ আমার বাড়িতেই চুরি হয়েছে। বাড়িতে মলমপাটি ঢুকে তালা ভেঙে টাকা পসয়া নিয়ে পালিয়ে গেছে। কয়েক দিন পর পর এমন ঘটনা হচ্ছে। আমরা মলম পার্টির ভয়ে রাত জেগে জেগে এখন বাড়ি-ঘর পাহারা দিচ্ছি।  

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, আমি থানায় যোগদান করার পরপরই মাদকসেবন-বিক্রি, চুরি, জুয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। তেঁতুলিয়ায় যেন কোন মানুষের বাড়িতে চুরি না হয় বা কেউ হয়রানীর শিকার না হয়. সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মলম পার্টির চক্র যদি থেকে থাকে তাহলে তাঁদের অবশ্যই ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।  

news24bd.tv/desk

এই রকম আরও টপিক