‘দেশে গরুর মাংস ৮০০ টাকা, ভারত-পাকিস্তানে ৩০০ টাকা কমে বিক্রি’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ

‘দেশে গরুর মাংস ৮০০ টাকা, ভারত-পাকিস্তানে ৩০০ টাকা কমে বিক্রি’

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ভোজ্যতেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য ৪-৫ টি বড় কর্পোরেট কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা যাতে অন্যায্যভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সরকারের নজরদারি রয়েছে। যেসব কর্পোরেট কোম্পানি অতিমুনাফার জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর আধিপত্যের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পণ্য মজুদসহ অন্যায়ভাবে দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতা কমিশনে ৫৩টি মামলা চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা হলেও ভারত, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩০০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ভোক্তাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণও দায়ী। আমাদের বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।

কিন্তু ভোক্তাকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মধ্যস্বত্ত্বভোগী ছাড়াও পরিবহণ ভাড়া ও রাস্তায় পদে পদে চাঁদাবাজীও দায়ী। এসবের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ অপর্যাপ্ত। তবে গণমাধ্যম অনিয়মের বিপক্ষে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ’

আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান এসব কথা বলেন।

প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে জনবান্ধব কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতাও এর জন্য দায়ী। বাজার নিয়স্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সব সময়ই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করে থাকে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী শিল্পমালিকরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে সুকৌশলে তেল, চিনি, ডিম, মুরগির দাম বড়িয়ে দেয়। তা প্রতিরোধে আরও শক্তিশালী বাজার মনিটরিং টিম গঠন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। যে মনিটরিং টিম শুধু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে বাজার মনিটরিং টিম মাথানত করলে এর সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে। সম্প্রতি ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, ধান, চালসহ ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে জড়িত মূল হোতা কাউকেই তেমন কোনো শাস্তির আওতায় আনতে দেখা যায়নি। দৃশ্যমানভাবে প্রভাবশালী এইসব বাজার সিন্ডিকেটকারীদের শাস্তি দেওয়া না গেলে অন্যান্যরা প্রশ্রয় পেতে থাকবে। অনিয়ম করতে ভয় পাবে না।

অনুষ্ঠানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিন্মোক্তো ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

সুপারিশসমূহ:-

১। বিএসটিআই, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমুহের সমন্বিত বাজার পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ কৌশল নির্ধারণ করা।

২। সম্প্রতি ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, ধান, চালসহ ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দৃশ্যমানভাবে শাস্তির আওতায় আনা যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে ভয় পায়।

৩। পণ্যের মজুদ, ইচ্ছাকৃত দাম বাড়ানোর মতো ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।

৪। এলাকাভিত্তিক বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেখানে সরকারি কমর্কতা, জনপ্রতিনিধি এবং নাগবিক সমাজের প্রতিনিথিত্ব থাকবে।

৫। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহ না করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১ কোটি পরিবারকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে অল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা।

৬। বাজার নিয়ন্ত্রণে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রজেক্টগুলো স্থগিত করে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে নিত্যপণ্য প্রতিকী মূল্যে সরবরাহ করা।

৭। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাসহ সিন্ডিকেট ও কালোবাজারীর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির শাস্তি টিভিসি, বিলবোর্ডসহ বড় বড় বাজারগুলোর সামনে প্রদর্শন করা।

৮। জেলা তথ্য অফিসারদের মাধ্যমে জেলা পর্যায় থেকে পণ্য সরবরাহ, মজুদ ও দাম সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯। দেশীয় উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং  কৃষক ও খামারি পর্যায়ে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে বেশি ঋণ প্রদান করা।

১০। পণ্যের নিরাপদ সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা।

‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যায়কে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বিজনেস এডিটর উম্মান নাহার আজমী, একাত্তর টিভির বিজনেস প্রোগ্রাম হোস্ট সাংবাদিক জুলিয়া আলম, দৈনিক প্রথম আলোর অর্থনৈতিক রিপোর্টার আরিফুর রহমান, ড. এস এম মোর্শেদ, অধ্যাপক ড. শাহ আলম চৌধুরী প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

news24bd.tvতৌহিদ