গভীর রাতে গোপনে নারীদের ভিডিও ধারণ, আতঙ্কে গ্রামবাসীর পাহারা

সংগৃহীত ছবি

গভীর রাতে গোপনে নারীদের ভিডিও ধারণ, আতঙ্কে গ্রামবাসীর পাহারা

অনলাইন ডেস্ক

কর্মব্যস্ত দিনের শেষে সবাই যখন ঘুমাতেন তখন জানালা দিয়ে নারীদের ভিডিও ধারণ করতো এক ব্যক্তি। নারীরা গভীর ঘুমে থাকলে শ্লীলতাহানিও করা হতো। প্রায় দেড় বছর ধরে এমন অপরাধ চলে আসছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার একটি গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি।

 

সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের দিবাগত রাতে ভিডিও ধারণের সময় গ্রামের এক কৃষক জানালার ভেতর থেকে একটি মোবাইল কেড়ে নিতে সক্ষম হন। সেই মোবাইলে পাওয়া যায় এমন দেড় শতাধিক ভিডিও ও ছবি, যার সবই স্বামী-স্ত্রী ও নারীদের ব্যক্তিগত।

গ্রামবাসী জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পারেননি। মুঠোফোনটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের সাইবার অপরাধ দল ঘটনাটি তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার তিনজনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে এখনো মামলা হয়নি।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই আপত্তিকর। আপাতত বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। পুলিশের সাইবার অপরাধ দলে বিষয়টি তদন্তে কাজ করছেন। এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

সরেজমিনে এলাকার বাসিন্দারা জানান, নারীরা ঘুমানোর পর তাঁদের ঘুমন্ত অবস্থার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। এমনকি জানালা দিয়ে নারীদের শরীরে হাত ও লাঠি দিয়ে খোঁচা দেওয়া হতো। নারীরা টের পেয়ে চিৎকার দিলে ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যেতেন।

আবদুল মান্নান বিশ্বাস নামের গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, গ্রামে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে গ্রামের যুবকেরা বিষয়টি নজরদারি করতে থাকেন। কিন্তু পাহারা দিয়েও তাঁকে ধরা যায়নি।

ফেরদৌস বিশ্বাস নামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন রাত তিনটার দিকে ঘরের জানালা দিয়ে কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করছিলেন। এতে তাঁর ঘুম ভেঙে গেলে তিনি ওই ব্যক্তির হাতে আঘাত করেন। তখন মুঠোফোনটি ঘরের ভেতরে পড়ে গেলেও ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান। তাঁর মুখ গামছা দিয়ে বাধা ছিল।  

ফেরদৌস আরও বলেন, ওই ব্যক্তির ফেলে যাওয়া মুঠোফোনে গ্রামের অনেক নারীর বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পাওয়া গেছে। কিন্তু কাজটি কে করেছেন, সেটা জানা যাচ্ছে না। মুঠোফোনের তথ্য দিয়েও তাঁরা বের করতে পারেননি।

ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য টিটু সিকদার বলেন, 'ফেরদৌসের কাছ থেকে অপরাধীর মোবাইলটি পাওয়ার পর আমরা সামাজিকভাবে বসে জানার চেষ্টা করেছিলাম, সেটি কার। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই মোবাইলে গ্রামের বিভিন্ন পরিবার ও নারীর দেড় শতাধিক ব্যক্তিগত ভিডিও ও ছবি আছে। ' এসব ভিডিও ও ছবি তোলার সময়কাল দেড় বছরের বেশি বলে জানান এই ইউপি সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক নারী জানান, রাতে ঘুমালে জানালার কাছে এসে কেউ ফোনের আলো জ্বালান। চোখে আলো লেগে অনেক সময় তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। মাঝেমধ্যে লাঠি বা হাত দিয়ে শরীরে খোঁচাও দেওয়া হয়। টের পেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান।

news24bd/ARH