লোডশেডিং: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি

প্রতীকী ছবি

লোডশেডিং: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

একদিনের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে লোডশেডিং। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়াও এদিন জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে ভারতের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ। এর সঙ্গে সরকারের পদক্ষেপে বিদ্যুতের উৎপাদনও কিছুটা বেড়েছে।

পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে (পিডিবি) শুক্রবার দিনের বেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয় ১১ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে এদিন লোডশেডিং করতে হয় মাত্র ২৪৬ মেগাওয়াটের।

এদিন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত হয় ৬ হাজার ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।  

একইভাবে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৫ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত হয় ১৭শ’ ৪৩ মেগাওয়াট, হাইড্রো থেকে ২৫ মেগাওয়াট, সোলার থেকে ২০৯ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে ২ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা থেকে ৯২৮ মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে ১১২ মেগাওয়াট।

এদিন ভারতের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে যোগ হয়েছে ৭৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর আগের দিনও এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হয় ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রথম ইউনিট এবং দ্বিতীয় ইউনিট মিলে সংকটকালে দেশের গ্রিডে আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যোগ হচ্ছে হচ্ছে ১ হাজার মেগাওয়াটের থেকে বেশি বিদ্যুৎ। যা সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলায় অনেকটাই ভূমিকা রাখছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।

এদিকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দেশের কোনো কোনো এলাকা লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে ছিল। এর মধ্যে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি কোনো লোডশেডিং করেনি। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকাতেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক উন্নতি হয়েছে জানিয়ে পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ পরিদপ্তর) মো. শামীম হাসান  বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অনেক এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। বৃষ্টিতে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।  

তীব্র দাবদাহের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে নেমেছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে বিদ্যুতের চাহিদায় ফেলেছে দারুণ প্রভাব। ছুটির দিনের পাশাপাশি শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির কারণে চাহিদা নেমে এসেছে গত কয়েকদিনের চাইতে প্রায় অর্ধেকে।

গত কয়েক দিন ধরে যা ছিল ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি। এ ছাড়া দেশের তাপমাত্রাও বৃষ্টির কারণে অন্তত ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি কমেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে।  

ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ঢাকায় ডেসকোর ১১৩০ মেগাওয়াট এবং ডিপিডিসির ১৫৬৪ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকার আরইবি এলাকায় ২২৭৪ মেগাওয়াটের পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামে পিডিবির চাহিদা ছিল ১০৭৫ মেগাওয়াট এবং আরইবির চাহিদা ছিল ৪০৯ মেগাওয়াট। এনএলডিসি বলছে চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ ছিল। কোথাও লোডশেডিং হয়নি। লোডশেডিংয়ের বাইরে ছিল খুলনাও। ওয়েস্টজোন ৫৪৩ মেগাওয়াট এবং আরইবির ১৩৫১  মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটা সরবরাহ করেছে।

বরিশালে লোডশেডিং ছিল মাত্র ২ মেগাওয়াট। বরিশালে ওয়েস্টজোনে ১৩১ চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া আরইবির ৩৬৬ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৬৪ মেগাওয়াট। কুমিল্লায় পিডিবির ৩২৪ এবং আরইবির ১০৭৮ মেগাওয়াটের পুরোটা সরবরাহ করা হয়েছে।  

এ ছাড়া ময়মনসিংহে পিডিবির ৬৬৭ মেগাওয়াটের মধ্যে ৪২৭ মেগাওয়াট সরবরাহ ছিল। লোডশেডিং হয়েছে ৪০ মেগাওয়াট। আরইবির ৯৯৪ মেগাওয়াটের স্থলে সরবরাহ হয়েছে ৭২১ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ২৭৩ মেগাওয়াট। সিলেটে পিডিবির ১৯৯ মেগাওয়াটের স্থলে সরবরাহ ছিল ১৯০ মেগাওয়াট। মাত্র ৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।

অন্যদিকে আরইবির ১৩৫১ মেগাওয়াটের মধ্যে ১৩২৯ মেগাওয়াট সরবরাহ ছিল। লোডশেডিং ছিল ২২ মেগাওয়াট। রাজশাহীতে নেসকোর ৪৮৫ মেগাওয়াট চাহিদার ৪৫৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। মাত্র ৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। এ ছাড়া আরইবির ১১৭২ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে ১০৪৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। লোডশেডিং হয়েছে ১২৭ মেগাওয়াট। রংপুরে নেসকোর ৩৫১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ২৯৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। আর আরইবির ৭২৫ মেগাওয়াটের স্থলে ৫৫২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।

সারাদেশে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ৭৭২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। দুই দিন আগেও যেসব এলাকার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পিডিবি’র তথ্যমতে বৃহস্পতিবার দিনের বেলা দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৬৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।  

news24bd.tv/কেআই

এই রকম আরও টপিক