'টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেয়া কোনো সমাধান নয়'

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান।

'টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেয়া কোনো সমাধান নয়'

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেয়ার চেষ্টা করলে সেটি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভের পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

শনিবার (১০ জুন) ঢাকার এফডিসিতে এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কি না এ বিষয়ে এক ছায়া সংসদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

মির্জ্জা আজিজুল বলেন, আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির টার্গেট ৭.৫% ধরা হলেও তা বাস্তবতা বিবর্জিত। বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশ্বের সর্বনিম্ন। তাই অধিক কর আহরণের জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।

এসময় তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত না আসা প্রসঙ্গে টাকা পাচার না হওয়ার যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নির্বাচনী বছরের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জনজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকা প্রত্যেক টিন (TIN) ধারীকে দুই হাজার টাকা কর পরিশোধের বিধান মানুষকে টিন গ্রহণ ও কর প্রদানে অনুৎসাহী করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, টাকা ছাপিয়ে সরকারের অর্থের সংকট মোকাবেলা করার চেষ্টা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। এই বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার যে বিশাল আকারের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিবে। এছাড়া সরকার যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেয়, তা ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেবে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান ডলার সংকট ও আমদানিতে বিধিনিষেধ নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত করবে। আর্থিকখাতের সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারায় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

বিতর্ক অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাজেট পাশের পূর্বে ১০ দফা সুপারিশ বিবেচনায় নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সুপারিশগুলো হলো- ১. আয়কর প্রদানযোগ্য নয় এমন টিনধারী ব্যক্তিদের ২ হাজার টাকা কর প্রদান ও আভ্যন্তরীণ আকাশপথে ভ্রমণকর ২ শত টাকা প্রত্যাহার করা। ২. জ্বালানী, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বয়স্কভাতা, বিধাবাভাতা ও প্রতিবন্ধীভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা। ৪. ধনী দরিদ্রের আয় বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারার সুযোগ তৈরি করা। ৫. আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে পরিকল্পিত দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৬. পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আদলে অন্তত ১ কোটি পরিবারকে রেশনকার্ড প্রদান করা। যাতে তারা স্বল্পমূল্যে পাক্ষিক ভিত্তিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের সুযোগ পায়। ৭. সবার জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ৮) মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৯. প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। ১০. বেকার সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করা ও সম্ভব হলে বেকার ভাতা প্রবর্তন করা।

“এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

news24bd.tv/FA